বিদেশি কবুতর পালনে স্বাবলম্বী আফজাল

শখের বসে কবুতর পালন শুরু করেছিলেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার শেখ আফজাল হোসেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি গড়ে তোলেন বিদেশি কবুতরের খামার। এর মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী। জেকোবিন, আমেরিকান ফেনটাইল, জার্মান শিল্ড, ইন্ডিয়ান লক্ষা, বোখারা ও শার্টিন নামের উচ্চমূল্যের বিদেশি কবুতর পালনে সফলতা পেয়েছেন তিনি।

সিলেটের এমসি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করে ব্যবসা করার ইচ্ছে ছিল শেখ আফজাল হোসেনের। উপজেলা সদরের নতুন বাজারে একটি খেলাঘরের মাধ্যমে সে ইচ্ছের কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে তার। তবে, তাদের পারিবারিকভাবে দেশি কবুতর পালনের বিষয়টি যুবক আফজালের মনে দাগ কাটে।

লেখাপড়ায় থাকাকালে মনোযোগ দেন দেশি কবুতর লালন-পালনের কাজে। এগুলো কিনতে গিয়ে খোঁজ পান বিভিন্ন জাতের বিদেশি কবুতরের। এর মধ্যে তিন জোড়া শিরাজী ও শার্টিন কবুতর দিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার বিদেশি জাতের কবুতর পালন। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্যান্য জাতের বিদেশি কবুতরগুলোও সংগ্রহ করেন। ধীরে ধীরে আফজালের শখের কবুতর পালন রূপ নেয় ‘এসকে পিজিয়ন লফট’ নামের খামারে।

বাচ্চা এবং বিক্রয় উপযোগী কবুতর অনলাইনে বিক্রয় শুরু করেন আফজাল। বিশ্বনাথে প্রথম বিদেশি কবুতরের বাণিজ্যিক ফার্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করে তার ‘এসকে পিজিয়ন লফট’। চার বছর পূর্বে শুরু করা তার এই ফার্ম থেকে এখন প্রতি মাসে আয় হয় পঁচিশ হাজার টাকার মতো।

সরেজমিনে বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের উত্তর ধর্মদা গ্রামে আফজালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসত ঘরের ছাদে রয়েছে তার কবুতরের খামার। নানা ধরনের খাঁচার মধ্যে থাকা নানা জাতের বিদেশি কবুতরগুলোকে পরম যত্নে মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন আফজাল।

তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, আমাদের ঘরে দেশি কবুতর পালন করা হয়। আমিও শখের বসে সেগুলো পালন শুরু করি। একসময় বিদেশি কবুতর দেখে সেগুলো পালনের শখ পেয়ে বসে।

বর্তমানে তার ফার্মে জেকোবিন, বোখারা, ইন্ডিয়ান লক্ষা, আমেরিকান ফেনটাইল, জার্মান শিল্ড, শার্টিন-এই ছয় জাতের ৬০টির অধিক বিদেশি কবুতর আছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক সাড়ে তিন লাখ টাকা। এর মধ্যে জেকোবিন জাতের মূল্য অনেক বেশি।

তার কাছ থেকে জানা যায়, বিক্রয় উপযোগী এক জোড়া জেকোবিনের দাম ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই জাতের এক জোড়া বাচ্চার দাম ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে অন্যান্য জাতের মধ্যে সর্বনিম্ন পনেরশ টাকা দামের কবুতরও রয়েছে তার খামারে।

শেখ আফজাল আরো জানান, তার বিদেশি জাতের কবুতরকে খাবার হিসেবে গম, ডাবলি, মোটর, চিনা, বাজরা, কুসুমফুল ইত্যাদি মিশ্রণ করে খাওয়াতে হয়। এতে করে মাসে ব্যয় হয় ৫ হাজার টাকার মত।

অপরদিকে, অনলাইনের মাধ্যমে কবুতর ও কবুতরের বাচ্চা বিক্রয় করে মাসে আয় হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অনলাইনে তার কবুতর বেশির ভাগই ভারত, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামেই বিক্রয় হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ওই উদ্যোক্তার মতো অন্য যুবকরাও এসব কাজে আগ্রহী হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে।’

এদিকে, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা যোগ্য, তারাই এসব ক্ষেত্রে ভালো করছে, সফল হচ্ছে। বিদেশি জাতের কবুতরের ফার্ম নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ও অধিক লাভজনক। আমরা শিগগিরই শেখ আফজালের ফার্ম পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবো।’

বিশেষ প্রতিবেদন, ইউএনবি।