ঢাকার শব্দ দূষণ সহ্য সীমার অনেক ঊর্ধ্বে

ঢাকায় বিদ্যমান শব্দ দূষণের মাত্রা মানুষের সহ্য সীমার দ্বিগুণের বেশি। যা জনস্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ২০১৭ সালে পরিচালনা করা এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

বুধবার আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে রাজধানীর কলাবাগানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ক্রমাগত শব্দ দূষণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি: প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সংস্থাটি জানায়, রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অফিস এলাকার মতো নীরব জায়গাগুলোও অতি মাত্রার শব্দ দূষণে আক্রান্ত। তারা দিনের বেলায় ঢাকার নীরব জায়গাগুলোতে ৮৩ থেকে ১০৪ ডেসিবল মাত্রার শব্দ পেয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালা অনুযায়ী শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবলের মধ্যে থাকার কথা।

পবার প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৯২-৯৮ এবং রাতের বেলা ৬৮-৮৩ ডেসিবল। যা আদর্শ মান যথাক্রমে ৫৫ এবং ৪৫ ডেসিবল থেকে অনেক বেশি।

মিশ্র এবং বাণিজ্যিক এলাকায়ও শব্দ দূষণের মাত্রা অনেক বেশি বলে জানায় পবা। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোবহান বলেন, ‘শব্দ দূষণের বিষয়ে ২০০৬ সালে একটি নীতিমালা করা হয়। সেখানে পুরো শহরকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার মতো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় এবং শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা বেঁধে দেয়া হয়।’

কিন্তু রাজধানীর শব্দ দূষণ অসহ্য মাত্রায় উপনীত হলেও কেউ কোনো নজর দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন আবদুস সোবহান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবলের বেশি হলে একজন ব্যক্তি সাময়িকভাবে বধির হয়ে যেতে পারেন। আর ১০০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ একজনের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত করে দিতে পারে।

তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ নাগরিক শ্রবণশক্তির বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত। যেখানে ১৫ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেয়া বক্তাদের অভিযোগ, যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাব, আইন অমান্য, শহরবাসীর অসচেতনতা এবং আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর অনাগ্রহের কারণে শব্দ দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পবার সভাপতি আবু নাসের খান শব্দ দূষণকে নীরব ঘাতক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটি হৃদরোগ, মানসিক বিরক্তি, পরিপাকে সমস্যা এবং বধিরতা সৃষ্টি করছে। ঢাকার শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং গাড়ি চালকসহ অন্যদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মত দেন তিনি।