দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মো. আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে তিনি শপথ নিয়েছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতিগণ, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনীতিবিদ, বিদেশি কূটনৈতিক ও অন্যান্য বিশিষ্টজনরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল হামিদকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। যার ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হন আবদুল হামিদ। এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্ব নেয়া আবদুল হামিদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হয় আজ ২৩ এপ্রিল।

বঙ্গভবনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম তায়েব উদ্দিন এবং মায়ের নাম তমিজা খাতুন।

আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার নিকলী জি সি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি আইন পেশায় যোগ দেন।

১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬২ সালে তিনি হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরোধিতা করেন এবং তখন ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ১৯৬৫-৬৬ সালে গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপিত এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে ১৯৬৮ সালে তিনি আবারো কারাবরণ করেন। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আবদুল হামিদ ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য এবং পরে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচন হন।

তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার ও পরে স্পিকার নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে আবারো স্পিকার নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের ২০ মার্চ মৃত্যুবরণ করলে আবদুল হামিদ ওই দিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একই বছরের ২২ এপ্রিল প্রতিদ্বন্দিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ইউএনবি।