বাংলাদেশের যে অঞ্চলে ফেসবুক মানেই আতঙ্ক

তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় ঝড় তোলা জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এখন বিয়ানীবাজারবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। অনেক ব্যবহারকারীও ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। যুগের হাওয়ায় জেনে শুনে যারা এ মাধ্যমে গা ভাসিয়েছিলেন তারা এখন সামাজিক মর্যাদা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ বিয়ানীবাজার উপজেলায় অঘটনের মহাকারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, ফেসবুক স্থানীয়ভাবে হানাহানি-রেষারেষির মাত্রা কেবল বাড়াচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা,ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব।

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ছবি ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে প্রকাশ্যে এক জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগকর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পৌরশহরে মিছিল বের করে ছাত্রলীগের স্বাধীন গ্রুপ।

পিএইচজি স্কুল প্রাঙ্গণে ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগকর্মী নোমান আহমদের সাথে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাফিজ এমাদ উদ্দিনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে তাদের দুজনই কমবেশি আহত ও অপদস্থ হন।

চারখাইয়ে ডা: জোবায়ের আহমদ ফেসবুকে একটি সচেতনতামূলক স্ট্যাটাস দেয়ায় তাকে অন্যত্র চলে যাওয়ার দাবিতে স্থানীয়দের একাংশ সড়ক অবরোধ করে।

এর আগে বাংলা টিভি নামের একটি ভূয়া ফেসবুক আইডি থেকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো: আব্দুস শুকুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাছিব মনিয়া, কয়েকজন সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীর নামে অশালীন ও আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়া হয়।

এছাড়াও মাথিউরা সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক নুরুল ইসলাম জিহাদী কর্তৃক এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়। ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় একটি ভবন থেকে সাকের আহমদ নামের অটোরিকশাচালক পড়ে যাওয়ার ঘটনায় ফেসবুকে নানা ধরনের স্ট্যাটাস দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়।

এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজ আইডি থেকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ উপস্থাপন করে। তিনি এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। এছাড়াও পৌরশহরের ইমিগ্রেশন পরামর্শক মাহবুবুল আলম আজাদের কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, যারা এসব করছে তাদের রুচি অত্যন্ত নিম্নমানের। এদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর জানান, যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ফেসবুককে কলুষিত করে ফেলছে একদল সাইবার অপরাধী। তারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রাজনীতিকদের নামে অশালীন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এ সকল দুর্বৃত্ত। খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সী জানান, ফেসবুকে অপপ্রচার এবং প্রযুক্তিগত অপব্যবহার নিয়ে থানায় নিয়মিত সাধারণ ডায়রি করেন ভূক্তভোগীরা। আমরা এসব ডায়রির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি। তবে কিছু আইডি দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় আমাদের অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না। ইউএনবি।