নেপালের তদন্তে কিছু ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে, বলছে ইউএস বাংলা

গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-২১১ ফ্লাইটের কোনো ত্রুটি ছিল না এবং বিমান চালক ক্যাপ্টেন আবিদও সুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেছেন বেসরকারি এই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। একই সাথে নেপালের সিভিল এভিয়েশনের দেয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে বলে দাবি করেছে ইউএস-বাংলা।

বিমান দুর্ঘটনার এক মাস পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নেপাল কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়, ‘ত্রিভুবন কর্তৃপক্ষ বিমান দুর্ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যে তাদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছিল।’

কিন্তু দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যদি কর্তৃপক্ষ দুই মিনিটের মধ্যে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করতো তাহলে হতাহতের সংখ্যা আরো কম হতে পারতো। রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ।

তিনি বলেন, ‘নেপাল ও বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজটিতে কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটি ছিল না। ইউএস-বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদনেও কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল না বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন। তার অবসাদগ্রস্ত হওয়া কিংবা জোর করে পাঠানোর বিষয়টি অবান্তর।’

ইমরান আসিফ বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ছবি প্রকাশ করে। বলা হয়েছে বিমানটি পুরনো ছিল, পাইলটকে জোর করে পাঠানো হয়েছে, তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। তবে এসব তথ্য সঠিক নয়।’

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার জন্য নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

ইউএস-বাংলার দাবি, ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইউএস-বাংলার বিমানকে দেয়া ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করে একই সময়ে অন্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অবতরণের অনুমতি দিয়ে আন্তর্জাতিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।

ইমরান আসিফ আরো বলেন,ওই বিমানের কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রায় দুই বছর ধরে ইউএস-বাংলায় কর্মরত। তিনি ‘আরিরাং এভিয়েশন’ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বৈমানিক, তার ফ্লাইং আওয়ার ছিল ৪০০ ঘণ্টারও বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একজন পাইলট দৈনিক ১৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে পারেন। রুল অনুযায়ী তিনি ১১ ঘণ্টা ফ্লাই করতে পারেন। দুর্ঘটনার দিন যদি আবিদ ফ্লাইট নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসতো তাহলে তার ফ্লাইং আওয়ার ৭ ঘণ্টার কম হতো। তার ক্যারিয়ারের মোট ফ্লাইং আওয়ার প্রায় ৬ হাজার ঘণ্টা।

দুর্ঘটনার পর ওইদিন ত্রিভুবনে দায়িত্বরত ছয়জন এয়ার ট্রাফিক অফিসারকে অন্যত্র বদলী করে দেয়ার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ।

এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন, ‘আমরা আশা করছি চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি সঠিক ও নিরপেক্ষ হবে এবং দুর্ঘটনার পেছনে আসল কারণটি বেরিয়ে আসবে।’

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-২১১ বিমানটি নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ মুহূর্তে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে বিমানের ৫০ জনের প্রাণহানি হয়। তার মধ্যে ২৭ জনই বাংলাদেশি।