ওয়ানডে নিয়ে কিছু ভাবতেই পারেন না মুমিনুল!

তার ব্যাটিং সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন নেই একেবারেই। প্রশ্ন নেই তার টেকনিক ও ফিটনেস সংক্রান্ত কোনো রকম দুর্বলতা নিয়েও। তারপরও মুমিনুল হক কেবলই হয়ে আছেন ‘টেস্ট ব্যাটসম্যান’। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে গেলেও মুমিনুল ব্রাত্য হয়ে আছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, মুমিনুল এখন আর সীমিত ওভারের কথা ভাবেনই না। কিংবা ভাবতেই পারেন না।

সীমিত ওভারের কথা ভাবেন না— মানে অবশ্য এটা নয় যে, তিনি আর সীমিত ওভারে ফিরতে চান না। মুমিনুল বরং তার নিজের নিজের ফরম্যাট হয়ে যাওয়া টেস্টে খেলতে চান এমন কিছু ইনিংস, যা এমনিতেই তাকে টেনে আনবে ওয়ানডের রঙিন দুনিয়ায়।

রোববার বিসিএলের শেষ দুই রাউন্ডের আগে মিরপুর একাডেমিতে অনুশীলন করছিলেন এই বাঁহতি ব্যাটসম্যান। এর ফাঁকেই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। তখনই কথা বলেন নিজের খেলা এবং টেস্ট ও ওয়ানডে নিয়ে।

দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে এতো ভালো খেলেও কেনো সীমিত ওভারে তিনি সেভাবে আলোচনায় থাকেন না, এ সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এ বিষয়ে প্রচুর কথা হয়েছে এবং আমিও নানাভাবে উত্তর দিয়েছি। কিন্তু কথা তো একটাই! ওয়ানডে আমার খেলতেই হবে, এ রকম কোনো চিন্তা নেই। টেস্টে যদি খুব ভালো ও ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারি, তাহলে এমনিতেই সুযোগ আসবে। এটা নিয়ে আমার কোন তাড়াহুড়া নেই।’

মুমিনুলের মেজাজটাও হয়তো টেস্ট ক্রিকেটের মতো গাম্ভীর্যপূর্ণ, হয়তো এ কারণেই তাকে কোনো তাড়াহুড়া তাড়া করে বেড়ায় না। যেমন তাকে এখনই তাড়া করছে না উইন্ডিজ সফর বিষয়ক কোনো ভাবনা।

এ বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ দল যাবে ক্যারিবীয় সফরে। সেই সফরের টেস্ট দলে মুমিনুলের না থাকার কোনো কারণ নেই। এমনিতে ক্যারিবীয় অঞ্চল উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার মঞ্চ। সুতরাং একটু আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার ভাবনা থাকে অনেকের। কিন্তু মুমিনুল এখানে ব্যতিক্রম। তিনি বরং বাস করছেন বর্তমানে— বিসিএলে।

মুমিনুল বলেন, ‘আপাতত ভাবনা শুধু বিসিএল নিয়েই। তবে টেস্টের মানসিকতা নিয়েই খেলছি। উইন্ডিজ সফর কেমন হবে, তার প্রস্তুতি কেমন হবে, এ সব নিয়ে বিসিএলের পর ভাববো। এখন শুধু বিসিএলটা ভালো খেলতে চাই।’

ভালো খেলার ইচ্ছেটা অবশ্য শুধু নিজের জন্য নয়, বরং নিজের দল ইসলামী ব্যাংক ইস্ট জোনকে চ্যাম্পিয়ন করাই মুমিনুলের মূল লক্ষ্য। চলতে থাকা বিসিএলের প্রথম তিন রাউন্ডে তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ রানের মালিক। লিগ শেষেও কি নিজেকে সবার উপরে দেখতে চান— এমন প্রশ্নে মুমিনুল বলেন, ‘আমার মাথায় কখনো নিজেকে উপরে দেখার চিন্তা থাকে না। আমি বরং দলের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। বিসিএলে আমার দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব ভালো সুযোগ আছে। এটা নিয়েই ভাবছি। আগে নিজের রান নিয়ে ভাবতাম। সেই ভাবনা ভুল ছিলো। এখন বুঝি।’

কিন্তু মনের কোণে কি আসলেই সবচেয়ে বেশি রান করার ইচ্ছেটা নেই মুমিনুলের? আছে! সেটা বোঝা গেলো তার পরের মন্তব্যেই, ‘দলকে চ্যাম্পিয়ন করাই মূল কথা। সেটা হয়ে গেলে দেখা যাবে, সবচেয়ে বেশি রান করাদের তালিকায় ওই দলেরই কেউ না কেউ থাকে।’

বিসিএলের গত রাউন্ডে না খেলা মুমিনুল আবার মাঠে নামবেন ১৭ তারিখ থেকে। বিসিবি নর্থ জোনের বিপক্ষে তার দল এই ম্যাচে খেলবে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। আগের তিন রাউন্ডের পাঁচ ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি, এক হাফ সেঞ্চুরি ও সর্বোচ্চ ২৫৮ রানে ভর করে মুমিনুল করেছেন ৩৮২ রান। যা সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তাকে রেখেছে তিন নম্বরে। পরের দুই রাউন্ডে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই যদি তিনি খেলতে পারেন, তবে শীর্ষে থেকেই লিগ শেষ করতে পারেন এই ব্যাটসম্যান।

সেটা হয়ে গেলে টেস্ট দলে নিজের জায়গাটাকে নিশ্চয় আরো শক্ত করার মতো শক্তি ও যুক্তি পেয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু রঙিন পোশাকে মুমিনুল ফিরবেন কিভাবে? রঙিন পোশাক নিয়ে নিজের চিন্তাকে কি তার লাগামই পরিয়ে রাখতে হবে?