অবিশ্বাস্য মোস্তাফিজ, তবুও সাকিবদের নাটকীয় জয়

ম্যাচটা জয়ের পথেই ছিল সাকিব আল হাসানের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। তাদের কাছ থেকে জয়টা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে জয়ের খুব কাছে চলে এসেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু শেষ ওভারে বেন কাটিং ১১ রানের পুঁজিটা আগলে রাখতে পারেননি। শেষ বলে চার মেরে হায়দরাবাদকে এক উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দেন বিলি স্ট্যানলেক।

মুম্বাইয়ের ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে পাঁচ উইকেটে ১২১ রান করেছিল হায়দরাবাদ। ৩০ বলে ২৭ রানের সহজ সমীকরণ ছিল অরেঞ্জ আর্মিদের সামনে। ১৬তম ওভারে মাত্র তিন রান খরচায় মুম্বাইকে লড়াইয়ে ফেরান মোস্তাফিজ।

পরের ওভারে নয় রান খরচ করেন বেন কাটিং। কিন্তু ১৮তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন জাসপ্রিত বুমরাহ। যা বাঁচিয়ে রাখে মুম্বাইয়ের আশা। পরের ওভারে রীতিমতো জাদু দেখান মোস্তাফিজ। অবিশ্বাস্য স্লোয়ার এবং কাটারে নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন হায়দরাবাদকে। মাত্র এক রান দিয়ে ওই ওভারে তিনি তুলে নেন দুই উইকেট। ম্যাচের ১৯তম ওভারে এক রানে দুই উইকেট; এমন অবিশ্বাস্য বোলিং দেখেছে আইপিএল! 

শেষ ওভারে হায়দরাবাদের দরকার ছিল ১১ রান। কাটিংয়ের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান দিপক হুদা। পরের বলে আবার ওয়াইড। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ম্যাচটায় পঞ্চম বলে হুদা ক্যাচ তুলে অল্পের জন্য বেঁচে যান। কঠিন ক্যাচটা নিতে বুমরাহ অবশ্য সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছেন। শেষ বলে এক রানের সমীকরণ বিলি স্ট্যানলেক মিলিয়ে দিলেন চার মেরে। জেতালেন হায়দরাবাদকে (১৫১/৯)।

হায়দরাবাদ অবশ্য শুরুটা দারুণই করে। উদ্বোধনী জুটিতে ৬২ রান তুলে অরেঞ্জ আর্মিরা। দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা (২২) ও শিখর ধাওয়ানকে (৪৫) ফিরিয়ে কিছুটা চাপমুক্ত হয় মুম্বাই। সাকিব ১২ বলে ১২ রান করে ফিরেন। পরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়ানো স্বাগতিকদের ইনিংসের হাল ধরেন দিপক। ২৫ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। অবদান রাখেন সাকিবদের জয়ে। আইপিএলের এবারে আসরে এটা সাকিবদের টানা দ্বিতীয় জয়। পক্ষান্তরে টানা দুই ম্যাচ হারলেন মোস্তাফিজরা।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ইনিংস

রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে টস জিতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হাতে ব্যাট তুলে দেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক কেন উইলয়িানমসন। ব্যাটিংয়ে নেমে অরেঞ্জ আর্মি বোলারদের তোপে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি অতিথি ব্যাটসম্যানরা। হাফ সেঞ্চুরি দূরের কথা, ত্রিশ রানেরও ব্যক্তিগত ইনিংস খেলতে পারেননি মুম্বাইয়ের কেউ। ১৭ বলে সর্বোচ্চ ২৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নিয়েছেন ওপেনার এভিন লুইস। ইনিংসে তিনটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান ক্যারিবীয় তারকা।

সূর্যকুমার যাদব এবং কাইরন পোলঅর্ড, দুজনই করেছেন সমান ২৮ রান করে। এই তিনজনের ছোটখাটো ইনিংসের সুবাদে দলীয় সংগ্রহ  দেড়শর কাছাকাছি নিয়ে যায় মুম্বাই। অতিথি বোলাররা পান ১৪৭ রানের মাঝারি মানের পুঁজি। মুম্বাইয়ের পতন হওয়া আট উইকেটের দুটি করে নিয়েছেন সন্দিপ শর্মা, বিলি স্ট্যানলেক এবং সিদ্ধার্থ কৌল।

আগের ম্যাচে বল হাতে দ্যুতি ছড়ানো সাকিব আল হাসান এদিন ছিল প্রায় নিষ্প্রভ। চার ওভারে ৩৪ রান খরচ করে মুম্বাইয়ের অলরাউন্ডার ক্রুনাল পান্ডিয়ার উইকেট নেন সাকিব। মুম্বাইকে দেড়শর মধ্যে বেঁধে ফেলার আসল নায়ক রশিদ খান। ৪ ওভারে আফগান স্পিনার খরচ করেছেন মাত্র ১৩ রান। সঙ্গে একটি উইকেটও নিয়েছেন তিনি।

সেরা পারফর্মার

হায়দরাবাদ-মুম্বাইর নাটকীয় ম্যাচটাতে দাপট দেখিয়েছেন দুই দলের বোলাররা। দ্যুতি ছড়িয়েছেন দুই দলের তিন বোলার। যেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল মুম্বাইয়ের মায়াঙ্ক মারকান্দের নাম। তিনি চার ওভারে ২৩ রানে চার উইকেট নিয়েছেন। মোস্তাফিজের পারফরম্যান্সও ছিলো অবিশ্বাস্য। ২৪ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের এই সেনসেশন। নিজের শেষ দুই ওভারে অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে চার রানে দুই উইকেট নেন মোস্তাফিজ। তার দুই ওভারের ফাঁকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে দ্যুতি ছড়ান বুমরাহ। তবে এক উইকেট পেলেও মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছেন রশিদ। চার ওভারে দিয়েছেন ১৩ রান। যা তাকে এনে দিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

দুই দলের পরবর্তী ম্যাচ

শনিবার ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে পরের ম্যাচ খেলবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ওই ম্যাচে মোস্তাফিজদের প্রতিপক্ষ দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়।

সে দিনই পরের ম্যাচে রাত সাড়ে আটটায় মাঠে নামবে সাকিবের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ওই ম্যাচটা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জন্য বিশেষ কিছুর উপলক্ষ। কারণ এই ম্যাচে যে সাবেক দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি সাকিবের বর্তমান দল হায়দরাবাদ। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে কলকাতার দূর্গ ইডেন গার্ডেন্সে।