কোটা সংস্কার: জয়ের দ্বারপ্রান্তে আন্দোলনকারীরা

দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজ পেপারকে বলেছেন, 'বুধবার সকালে আমরা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোন কোটা থাকবে না। আপা নিজেই অথবা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিবেন।' এদিকে আরেকটি সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদেও আন্দোলনকারীদের এমন সুখবর দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, বুধবার সকালে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এসময় তারা দেশব্যাপী ছাত্রদের আন্দোলনের খবর এবং দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ছাত্রলীগের এই শীর্ষ দুই নেতা ফেসবুকে ঘোষণা দেন, 'বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যা বলেন তা করেন। বিগত দিনে কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আজ সকালে আমরা (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করি। তিনি বলেন ' সরকারি চাকুরীতে কোন কোটা পদ্ধতি থাকবেনা'। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে ছাত্রসমাজ সাধুবাদ জানায়। অশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু'।

সর্বশেষ বিকেল পৌনে তিনটায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন ফেসবুকে জানান, আজ বিকাল ৫ টায় সংসদ টিভি তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার নিয়ে কথা বলবেন। চোখ রাখুন সংসদ টিভিতে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে জয়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে আন্দোলনকারীরা।

পাঁচটি দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন করছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। এই ৫টি দাবি হচ্ছে- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।

এদিকে জাকির-সোহাগে এমন ঘোষণাতেও আন্দোলন থামছে না। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চান। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসান আল মামুন জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোটা সংস্কারের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা অথবা প্রজ্ঞাপন চাই। আমাদের প্রতিটি দাবি পূরণ হলেই আমরা আন্দোলন স্থগিত করবো।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাবির সুফিয়া কামাল হলে আন্দোলনকারীদের নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে গেলে নতুন মাত্রা পায় কোটা সংস্কার আন্দোলন। বুধবার সকাল থেকেই রাজধানী প্রায় অচল। শাহবাগ, টিএসসি, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি ২৭, সাত মসজিদ রোড, রামপুরা-বাড্ডা-বসুন্ধরা রোড ব্লক করে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ওদিকে সদরঘাট আর আরিচাতেও রাজপথে নেমে এসেছে ছাত্রজনতা। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে।