আন্দোলনে ‘কাবু’ ভারত, সংঘর্ষে নিহত ৯

সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে দলিতদের ‘ভারত অচল’ আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই সংঘর্ষে অন্তত কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যমে জানিয়েছে, একসঙ্গে আটটিরও বেশি রাজ্যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় সরকারগুলো। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছে যে কোনো কোন রাজ্যে সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, দলতি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশে একজন ছাত্র নেতাসহ অন্তত ছয় জন, উত্তর প্রদেশের মুজাফরনগর ও মেরঠে দুই জন এবং রাজস্থানের আলওয়ারে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কায়েক শতাধিক। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতের মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ড, বিহার ও উড়িষ্যাসহ বেশকিছু রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব রাজ্যের শহরের রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে দলিতরা। বিক্ষোভকারীরা রেললাইন ও সড়ক অবরোধ করায় রেল ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আশপাশের অন্যান্য রাজ্যেও এ আন্দোলন ছড়িয়ে পরেছে। এতে অন্তত আটটি রাজ্যের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, উদ্ভুত পরিস্থিতে স্থানীয় সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। পাঞ্জাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮৯ সালে ভারতের পার্লামেন্টে এসসি/এসটি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) অ্যাক্টের গুরুত্বপূর্ণ দুই ধারায় পরিবর্তনের আদেশ দেন। আদালতের ভাষ্য, অতীতে ‘অপব্যবহার’ হওয়ায় এ আইনে এখন থেকে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না করা এবং জামিনের বিধান করা।

কিন্তু আদালতের এ মতের ঠিক বিপরীতটি মনে করেন দলিত নেতারা। তারা বলছেন, এসসি/এসটি অ্যাক্টে নিম্নবর্ণের অর্থাৎ দলিতদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নতুন আদেশে দলিতরা আরও বেশি ‘অরক্ষিত’ মনে করছেন। এখন এ আইনের অপব্যবহার করে দলিতদের আরও বেশি হয়রানি করা হবে। নতুন আদেশ বাতিল করে আগের আইনে পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় ‘ভারত অচল’ কর্মসূচি আরও তীব্র করা হবে।

দেশটির এক সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৬ সালে শুধুমাত্র বর্ণবিদ্বেষের কারণে দলিতদের বিরুদ্ধে ৪০ হাজারের বেশি অপরাধ সংগঠিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনটির দুইটি ধারায় সংশোধনের ফলে দলিতদের অপরাধ প্রবনতা কমে আসবে।