বসুন্ধরা সিমেন্ট টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারের পরদিনই অনুশীলনে নেমে পড়েছে জিম্বাবুয়ে। এদিন সংবাদ মাধ্যমের সাথে মন খুলে কথা বলেছেন জিম্বাবুয়ের কোচ স্টিভেন ম্যাঙ্গোঙ্গো। বাংলাদেশের কাছে হার, স্পিন আক্রমণ এবং নিজ দলের স্পিন দুর্বলতাসহ আরো নানা বিষয়ে নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। এখানে তার কথার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তুলে ধরা হলো। 

প্রথম ম্যাচে কোন দল ভালো খেললো; এমন প্রশ্নে জিম্বাবুয়ের কোচ বলেন, “প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশই সেরা দল। তাদের স্পিনাররা খুব ভালো পারফর্ম করেছে এবং ম্যাচ জিতে নিয়েছে। তারা আমাদের চেয়ে দক্ষতায় এগিয়ে ছিলো। আর সেরা দলই সব সময় জিতে।”

সোজাসাপ্টা কথার মানুষ স্টিভেন ম্যাঙ্গোঙ্গো স্পিনারদের নিয়ে বলেন, “স্পিনাররা ম্যাচে অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে। তারা সুনিয়ন্ত্রিতভাবে বোলিং করেছে। তারা বল স্পিন করেছে প্রচুর। এতে করে আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেক কঠিন হয়ে গেছে এবং বাংলাদেশি স্পিনাররা উইকেট তুলে নিয়েছে।”

টেস্ট সিরিজে দুই দল তিনবার মুখোমুখি হবে। অর্থাৎ এখনো সিরিজে ফেরার সুযোগ আছে জিম্বাবুয়ের। এ বিষয়ে তাদের কোচ বলেন, “এটা বলা কঠিন। আমি আগেই বলেছি টাইগাররা ঘরের মাঠে অনেক শক্তিশালী দল। তা জেনে বুঝেই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। পরিস্থিতির বিবেচনায় বাস্তবতা হলো ভালো খেলতে পারলে টাইগাররা ঘরের মাঠে যে কোনো দলকেই হারাতে পারে। প্রথম ম্যাচে তাদের বোলাররা ভালো খেলেই ম্যাচ জিতেছে। আমরা আমাদের ভুল শোধরানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। জিম্বাবুয়ে উন্নতির ধারায় থাকা একটি দল। উপমহাদেশে ভালো খেলার জন্য আমাদের সামর্থ্য আরো বাড়াতে হবে। আমরা বাংলাদেশ ও উপমহাদেশে খেলতে শিখতে চাই, এই সিরিজ আমাদের জন্য দারুণ একটি সুযোগ।”

দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে চাপে রাখা নিয়ে তার কী পরিকল্পনা; এমন প্রশ্নে ম্যাঙ্গোঙ্গো বলেন, “আমাদের দলের পেসারদের উপর আমি খুবই খুশি। তিনাশে পানিয়াঙ্গারা, তেন্দাই চাতারা এবং এল্টন চিগুম্বুরা, এরা সবাই বাংলাদেশের পরিবেশ চিনে। তারা প্রথম ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছে। আমি খুশি হবো যদি তারা তাদের কাজটা ঠিকঠাক করে যায়। তবে পেসাররাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারবে না, স্পিনারদেরও এগিয়ে আসতে হবে।”

টেস্ট শেষ হয়ে গেছে তিনদিনেই। ফলে দ্বিতীয় টেস্টের আগে পাঁচদিনের বিরতি পাচ্ছে দুই দল। এই সময়ে বাংলাদেশের স্পিনের বিপক্ষে কতোটা প্রস্তুতি নেওয়া যাবে? এই প্রশ্ন করা হয়েছিলো জিম্বাবুয়ে কোচকে। তিনি বলেন, “খেলোয়াড়রা হতাশ, কোচদেরও মন খারাপ। আমরা প্রথম ম্যাচে ভালোভাবে ব্যাটিং করতে পারিনি। আমরা পেশাদার দল। আমাদের কাজই হলো উন্নতি করা এবং শক্তিশালী হয়ে উঠা। আজকের অনুশীলনে আমরা দেখিয়েছি যে, আমরা উন্নতি করতে চাই। উন্নতি করতেই আমরা মাঠে এসেছি, চেষ্টা করছি ভুলগুলো শোধরাতে। সুতরাং আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবো।”

তিনি বলেন, “একজন ব্যাটসম্যান টার্ন করা বলগুলো কিভাবে খেলে, তা আমাদের শিখতে হবে। আজ আমরা বোলিং মেশিনেও টার্নিং বলে অনুশীলন করেছি। এরপর ভালোভাবে শেখা পর্যন্ত চলবে অনুশীলন। এরপর মাঠে প্রমাণ করতে হবে নিজের শিক্ষাটা।”

তারপরও জিম্বাবুয়ে কোচের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো পাঁচদিনে কতোটা উন্নতি করা সম্ভব? তিনি বলেন, “রোম একদিনে তৈরি হয়নি। আমরা নিয়মিত শিখে যাবো, এতেই সব কিছু আরো ভালো হবে।”

জিম্বাবুয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত কোনো স্পিনারকেই এই সিরিজে পাচ্ছে না। স্বভাবতই আগের সিনিয়রদের মিস করার কথা জিম্বাবুয়ে কোচের। শেন উইলিয়ামস সিনিয়র ও দক্ষ স্পিনারদের একজন। তার না থাকা নিয়ে জিম্বাবুয়ে কোচের বক্তব্য, “প্রতিটি খেলোয়াড়ই গুরুত্বপূর্ণ। শেন উইলিয়ামস ৩০ জনের দলের একজন। সেও অন্য সবার মতো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের কথা বলতে চাই না। সবাই এক। দলে থাকতে হলে যোগ্যতা দেখাতে হবে। সেটা না পারলে দলে জায়গা হবে না। দলে নিজের জায়গার জন্য লড়াই করতে হয়।”

বাংলাদেশের তিন স্পিনার সাকিব, তাইজুল ও তরুণ জুবায়েরের প্রশংসা করেছেন জিম্বাবুয়ে কোচ। তিনি বলেন, “আমরা কঠিন পরিশ্রম করছি। আমি জানি তাদের অনেক দক্ষতা আছে। তারা ভালো বোলার। তবে আমরাও আন্তর্জাতিক দল। আমরা উপমহাদেশে খেলা শিখছি। আমরা উন্নতি করবো এবং আরো উপযোগী হয়ে উঠবো। তিনজন স্পিনার নিয়ে বাংলাদেশের যে স্পিন অ্যাটাক, এই অ্যাটাক আসলে মৃত্যুফাঁদ। যে কোনো দলের বিপক্ষেই উইকেট পেয়ে যাবে। আগে সাকিব একাই ছিলো। এখন তিনজন। তিনজনই কঠিন বোলার।”

স্পিনের বিপক্ষে ধারাবাহিক উন্নতির জন্য দরকার মানসিক শক্তি। সেই সাথে দক্ষতাও থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন জিম্বাবুয়ে কোচ। তিনি বলেন, “দক্ষতা দরকার এবং মানসিক শক্তিরও প্রয়োজন। বাংলাদেশের মতো জায়গায় স্পিন খেলতে চাইলে মানসিকভাবে অনেক শক্ত হতে হবে। আমার দলের অনেক খেলোয়াড় এতো দর্শকের সামনে খেলে দেখেনি। এ ছাড়া বাংলাদেশের বোলাররাও দক্ষ। সব মিলিয়ে এখানে স্পিনারদের বিপক্ষে ভালো করতে হলে মানসিক শক্তি হারালে চলবে না।”

দক্ষতা ও মানসিক শক্তি; নিজের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনটার অভাব বোধ করছেন? এই প্রশ্নে জিম্বাবুয়ে কোচ বলেন, “দুটোরই অভাব আছে। কেউ কেউ দক্ষতায় এগিয়ে, কেউ আবার আবোলতাবোল শট করে। সুতরাং ভুলের একটা মিশ্রণ রয়ে গেছে। দক্ষতার অভাবের সাথে মানসিক দুর্বলতাও আছে।”

নিজ দলের স্পিনারদের নিয়ে জিম্বাবুয়ের কোচের মন্তব্য, “আমাদের দলের বেশির ভাগ স্পিনারই তরুণ। তাদের নিয়ে ধৈর্য্য ধরে কাজ করতে হবে। স্পিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তবে যদি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দক্ষতা থাকে, যেমন বাংলাদেশি স্পিনারদের আছে, তাহলে ভিন্ন কথা। সাধারণত সেরা ছন্দে পৌঁছাতে স্পিনারদের অনেক সময় লাগে। ধারাবাহিক ভালো কিছুর জন্য ধৈর্য্য ধরতে হয়। সুতরাং আমরা ভালোভাবেই আমাদের স্পিন অদক্ষতার কথা জানি, এবং ধৈর্য্য ধরতে চাই। প্রসপার উতসেয়া, রেমন্ড প্রাইস ও গ্রায়েম ক্রিমারকে আমরা মিস করছি। আমাদের তিনজন অভিজ্ঞ স্পিনার দলে নেই। তবে তরুণরা শেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.