আমিনুল: দূরদৃষ্টি নেই, তাই এমন পরিণতি

দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোনো পরিকল্পনা নেই বলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের করুণ দশা হয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

সম্প্রতি ক্রিকেট বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন আমিনুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন মিরপুরে যা হয়, জাতীয় দল এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ খেলার মধ্যে সীমিত। এর বাইরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং বিপিএলেও অনেক জোর দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখ হলেও এটা বলছি যে, আমাদের ক্রিকেটশক্তির প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সামনে তাকাচ্ছি না।’

বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতায় হতাশ আমিনু বলেন, ‘একটা সময় বাংলাদেশে ফুটবল তুমুল জনপ্রিয় ছিলো। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে সেই জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। আশা করছি, ক্রিকেটও একই রকম পরিণতি ভোগ করবে না।’

আমিনুল গত দেড় বছর ধরে আইসিসির আঞ্চলিক উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তার কাজ হলো, এশিয়ার উন্নয়নশীল ক্রিকেট দেশগুলোর উঠে আসা নিশ্চিত করা। এ জন্য তিনি প্রতিটি দেশে নিযুক্ত স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের সমন্বয় করেন এবং তাদের কাজের বিষয়ে পরামর্শ দেন। এর আগে তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের একই দায়িত্বে ছিলেন।

নিজের ও দেশের টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা আমিনুল থাকেন মেলবোর্নে। সেখান থেকেই গভীরভাবে অনুসরণ করে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। আমিনুল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রথম বিভাগ ক্রিকেট দলগুলোর কার্যক্রম এবং অনুশীলন প্রক্রিয়াও অনুসরণ করি। যাতে আমাদের উন্নতির গ্রাফটা ধরা সম্ভব হয়। এর মধ্যে সর্বশেষ জাতীয় লিগের ফাইনালেও আমি উপস্থিত ছিলাম। যদিও বিসিবির কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে দেখিনি। অথচ বিপিএলের মঞ্চে মঞ্চে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়।’

বাংলাদেশ দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমিনুল তার বক্তব্যে বলেন যে, সাকিব-মাশরাফি-তামিম-মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ দলের মূল ভিত্তি। কিন্তু তাদের পরে কে সেরা— এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, যেভাবে নতুন প্রতিভা উঠে আসার কথা, তা আসেনি।

শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে আমিনুল বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার গোল্ডেন জেনারেশন চলে যাওয়ার পর তাদের এখন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের গোল্ডেন জেনারেশন যখন তাদের খেলা ছাড়বে, তখন কী হবে? সুতরাং আমাদের এট বুঝতে হবে যে আমাদের গোল্ডেন জেনারেশন সব সময় থাকবে না। অতএব, পরবর্তী আন্তর্জাতিক সিরিজের সাফল্যের চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের আরো দূরে তাকানো উচিত।’

গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ভালো খেলে এলেও অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলের পাঁচ সিনিয়রের পরে তাদের নাম উঠাতে পারেননি। এমন ব্যর্থতার কারণ হিসেবে আমিনুল ঘন ঘন কোচ পরিবর্তনকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ‘কোচ নিয়োগের সময় আমরা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দটাই সামনে আনি। কিন্তু দলের কী প্রয়োজন, সেটা আমরা চিন্তা করি না।’

এ বিষয়ে উদাহরণ টেনে আমিনুল বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের স্পিনাররা নিউজিল্যান্ডে ভালো কিছু করতে পারে না এবং সেখানে তাদের সংগ্রাম করতে হয়। আমাদের একজন স্পিন কোচও আছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে কিভাবে স্পিনটা কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের কোনো কোচ ছিলো না। মানে দাঁড়ালো আমরা নির্দিষ্ট কাজটা তখন করি না, যখন আমাদের সেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

জেমি সিডন্সের ইতিহাস টেনে আমিনুল বলেন, ‘আমাদের ব্যাটিং বুলবুলের অধীনে দারুণ উন্নত হয়েছে। কিন্তু তার বিদায়ের পর তার মতো সম্ভাবনাসম্পন্ন কোনো কোচ আমরা আনতে পারিনি। আমার মনে হয়, আমাদের দেশি কোচদের উপরও ভরসা করা উচিত। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

চান্দিকা হাথুরুসিংহের হঠাৎ চাকরি ছাড়ার পর মুশফিকুর রহিমকে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ারও সমালোচনা করেন আমিনুল। তার মতে, চান্দিকা যাওয়ার পর বাংলাদেশ এলোমেলো হয়ে যায়। এমন সময়ে টেস্ট অধিনায়কত্ব ভালোভাবে বুঝতে শুরু করা মুশফিককে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দূরদর্শী ছিলো না।