পিএসজিকে বিদায় করে শেষ আটে রিয়াল

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, তুমুল উত্তেজনা, গোলপোস্টের নাটকীয়তা, খেলোয়াড়দের রেষারেষি, অতঃপর লালকার্ড, সঙ্গে গোলরক্ষকদ্বদের স্বভাবসুলভ স্বরূপ পারফরম্যান্স। একটা আদর্শ ম্যাচের প্রায়সব উপাদানই ছিল প্যারিসের যুদ্ধে।

উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ জিতল ২-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে নেইমারবিহীন পিএসজি ৫-২ ব্যবধানে হেরে বিদায় নিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্ব থেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।

প্রথম লেগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে জিনেদিন জিদানের দলের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরেছিল প্যারিসিয়ানরা। ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে উপযুক্ত জবাবের অপেক্ষার প্রহর গুনছিল ফ্রেঞ্চ ক্লাবটি। কিন্তু পায়ের ইনজুরিতে নেইমার দ্বিতীয় লেগের মহারণে ছিটকে গেলে বড় ধরণের একটা ধাক্কা-ই খায় পিএসজি।

প্যারিসের মহাযুদ্ধে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের শূন্যতা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে উনাই এমেরির দল। কাভানি-ডি মারিয়া-এমবাপ্পেরা বেশ কয়েকটা আক্রমণ করেছেন এটা ঠিক, কিন্তু তাদের আক্রমণগুলো ছিল ছন্নছাড়া। সেগুলো দানা বেঁধে ওঠার আগেই একের পর এক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন এই ত্রয়ী। তখন বোধহয় রিও ডি জেনিইরোর বিলাসবহুল রিসোর্টে বসে টিভি পর্দায় দলের অসহায় হারটাই দেখেছেন নেইমার।

অথচ প্রণাভোমরার অনুপস্থিতির রাতে দারুণ একটা জয়ের আশায় মঙ্গলবার রিয়াল মাদ্রিদকে আতিথেয়তা দিয়েছিল পিএসজি। ঘরের মাঠ পার্ক ডু প্রিন্সেসে কাভানি-সিলভা-এমবাপ্পেদের সর্বোচ্চ সমর্থনটাও দিয়েছেন সমর্থকরা। এমনকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দুর্দান্ত হেডে ৫১ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পরও গলা ফাটিয়ে গেছে ভক্তকূল!

অথচ প্রায় অসম্ভব সমীকরণ সামনে রেখে রেফারির ওপর রাগ উগড়ে দিয়ে পিএসজির বিপদ ডেকে আনলেন মার্কো ভেরাত্তি। ৬৬ মিনিটে দেখলেন দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। ভেরাত্তির ক্যারিয়ারের অষ্টম লাল কার্ডটাই বোধহয় শাপেবর হয়ে এসেছিল পিএসজির জন্য।

দশ জনে পরিণত হওয়া স্বাগতিক শিবির একটু পরই রিয়ালের জাল কাঁপায়। পিএসজিকে সমতায় ফেরান কাভানি। উরুগুয়েন স্ট্রাইকারের ভাগ্যবসত গোলের পরপরই নড়েচড়ে বসেছিল পার্ক ডু প্রিন্সেসের গ্যালারি। কিন্তু ৮০ মিনিটে পিএসজির ক্ষীণ সম্ভাবনাটাও শেষ করে দেন ক্যাসেমিরো। রিয়ালের জয়সূচক গোল করে স্কোর লাইন ২-১ করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা।

রিয়ালের জয়ের ব্যবধান আরো বাড়তে পারতো। যদি না শেষ দিকে অ্যাসেনসিওর দারুণ শটটা পিএসজির গোলপোস্ট ঠেকিয়ে না দিতো। করিম বেনজেমা যদি একের পর এক শিশুতোষ ভুল না করতেন তাহলে হয়তো বা এদিনও বিধ্বস্ত হতো পিএসজি। কারণ স্বাগতিক গোলরক্ষককে দুবার একা পেয়েও জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেননি ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার!

আসলে দ্যানি আলভেজের ছোট্ট একটা ভুলেই পিছিয়ে পড়েছিল পিএসজি। বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি মাঝ মাঠে। আলভেজের কাছ থেকে বলটা কেড়ে নেন অ্যাসেনসিও। স্প্যানিশ তরুণ তুর্কি দারুণ দক্ষতায় পাস দেন লুকাস ভাজকুয়েজকে। পিএসজির গোলমুখে তখন প্রায় ওৎ পেতে ছিলেন রোনালদো।

ভাজকুয়েজের চমৎকার ক্রসটাতে মাথা ছুঁইয়ে লিগের এবারের আসরের ১২তম গোল করেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। এ নিয়ে ইউরোপের মঞ্চে টানা নয় ম্যাচে গোল করলেন বর্ষসেরা ফুটবলার। দুই সপ্তাহ আগে প্রিয় টুর্নামেন্টের শেষে ষোলোর প্রথম লেগেও দুই গোল করেছিলেন রোনালদো।

পুরো ম্যাচে গ্যালারিতে কান পাতাই ছিল দায়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, হৈ হুল্লোড় করে মাতিয়ে রাখেন লড়াইটাকে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্তে প্যারিসে নেমে এসেছিল শশ্মানের নীরবতা। দুদিন আগে ফিওরেন্তিনা অধিনায়ক ও ইতালিয়ান ফুটবলার ডেভিড আস্তরির অকাল মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত সবাই।

প্রথম লেগ: রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ পিএসজি, দ্বিতীয় লেগ: পিএসজি ১-২ রিয়াল মাদ্রিদ; * দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ গোলে এগিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ।