পিএসজি-রিয়াল: প্যারিসে প্রস্তুত দ্বিতীয় যুদ্ধের মঞ্চ

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হার। প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) জন্য ফিরতি লেগটা যে সহজ হবে না সেটা অনুমিতই। অথচ মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের কয়েক দিন আগে বড় ধরণের একটা ধাক্কাই খেল পিএসজি। পায়ের ইনজুরি কেড়ে নিয়েছে প্রাণভোমরা নেইমারকে। তাই মঙ্গলবার রাতে ঘরের মাঠ পার্ক ডু প্রিন্সেসে রিয়ালের কাছে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে তাদের।

চোটের থাবা আছে রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরেও। ইনজুরির কারণে প্যারিসের মহাযুদ্ধে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন মধ্য মাঠের সেরা দুই তারকা টনি ক্রুস এবং লুকা মডরিচ। তবে দুজনকেই দলের সঙ্গে রেখেছে রিয়াল, ম্যাচের আগের সুখবরের আশায়। পিএসজি কোচ উনাই এমেরি অবশ্য পূর্ণশক্তির রিয়ালকে মোকাবেলার কথা বলেছেন ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে। সেটা হয়তো বা মুখে বলেছেন তিনি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার খুশি হওয়ার কথা।

এ যুগল মাঠে খেলুক বা না খেলুক, পিএসজি অন্তত ২-০ গোলে জিতলেই খুশি হবেন এমেরি। তবে গোল হজম করলেই বিপদ। তখন চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটের জন্য জিততে হবে ৪-১ গোলে! সমীকরণ যতই কঠিন হোক সেটা মেলাতে প্রস্তুত আছে ফ্রেঞ্চ ক্লাবটি। নেইমারকে ছাড়াই শেষ দুটি ম্যাচও জিতেছে তারা। পিএসজির জন্য স্বস্তির খবর- এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে আছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। শেষ চার ম্যাচে চার গোল করে আর্জেন্টাইন উইঙ্গার রিয়ালকে ছুড়ে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জও। 

ফর্মের তুঙ্গে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও। এক ম্যাচ বিশ্রামের পর জোড়া গোল দিয়ে ফিরেছেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যের সুবাদে গেটাফের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে প্যারিসে পা ফেলেছে জিনেদিন জিদানের দল।

পিএসজির জন্য নকআউট পর্বের প্রথম ধাপ পারি দেওয়া যতটা কঠিন, ততটাই সহজ রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। এদিন ড্র করলেই চলবে রোনালদো অ্যান্ড কোংকে। অন্তত এক গোলের ব্যবধানে হারলেও পথ মসৃণ থাকবে তাদের।

চোট শঙ্কা ছিল পিএসজির আক্রমণভাগের আরেক সারথি কিলিয়ান এমবাপ্পেরও। কিন্তু কোচ এমেরি আশার বাণীই শুনিয়েছেন ভক্তকূলকে। ফ্রেঞ্চ উইঙ্গারকেও ইনজুরিতে পড়েছিলেন মার্শেই ম্যাচ।

নেইমারবিহীন পিএসজির জয়ের জন্য কাঠখড় পোড়াতে হয়নি শেষ তিন ম্যাচে। এর মধ্যে সবশেষ ট্রয়েসের বিপক্ষে মূল একাদশের বেশ কয়েকজনকেই বিশ্রাম দিয়েছিলেন পিএসজি কোচ এমেরি। রিয়াল ম্যাচের জন্যই কাভানিদের বিশ্রামটা দেওয়া হয়েছিল। বহুল প্রতীক্ষিত সেই ম্যাচটা মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় রান পৌনে দুইটায়)। তাও আবার ঘরের মাঠে, পরিচিত দর্শকদের সামনে।

জয়ের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস তো এটাই। তাছাড়া নিজেদের দুর্গে বড়বড় দলকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর অভিজ্ঞতাও তো আছে তাদের। এই তো মৌসুমের শুরুর দিকে বায়ার্ন মিউনিখকে ডেকে এনে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল পিএসজি। গত বছর বার্সেলোনাকেও ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল ফ্রেঞ্চ ক্লাবটি। সেই ম্যাচে নেইমার ছিলেন বার্সার খেলোয়াড়। ফিরতি লেগে নেইমারের অলৌকিক পারফরম্যান্সে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল পিএসজির।

আজ বার্সার মতো তেমনই একটি রূপকথার জয়ের আশায় বুঁদ হয়ে আছে পিএসজি। এজন্য সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন স্বাগতিক কোচ এমেরি। বলেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাঠে নামার জন্য আমরা প্রস্তুত। দল এখন ছন্দে আছে। আমার বিশ্বাস এটা রিয়াল ম্যাচে কাজে লাগবে।’

তবে পিএসজির যত ভয় রোনালদোকে নিয়ে। যিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরের প্রত্যেক ম্যাচেই করেছেন গোল। এমেরি খুব করেই চাইবেন আজ রোনালদোকে বোতলবন্দি করে রাখতে।

কিন্তু রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস চাইছেন আগের লেগের পুণরাবৃত্তি করতে। তিনি বলেছেন, ‘প্রথম লেগে আমরা দারুণ খেলেছি। প্যারিসেও আমরা তেমন খেলতে চাই। কিন্তু এটা সহজ হবে না। কারণ আমরা কঠিন একটা দলের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি।’

আজ চ্যাম্পিয়নস লিগের আরো একটা ম্যাচ আছে। সেটা শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। কারণ প্রথম লেগে পোর্তোকে তাদেরই মাঠে ৫-০ গোলে চূর্ণ করে মূল কাজটা যে আগেই সেরে রেখেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল! তাই অ্যানফিল্ডের নিয়মরক্ষার লড়াইয়ে নয়, গোটা ফুটবল দুনিয়ার চোখ থাকার কথা প্যারিসে, ক্লাব ফুটবলের দুই অভিজাত দলের মহারণের দিকে।