মেসি-রোনালদোর ধরাছোঁয়ার বাইরে যেসব রেকর্ড

রেকর্ড ভাঙা গড়ার জন্যই যেন ফুটবল দুনিয়ায় জন্ম হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির। মুড়ি মুরকির মতো গোল করে অনেক রথী-মহারথিকে পেছনে ফেলেছেন এ মানিকজোড়। এই সময়ের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলারকে অনেকদিন ধরেই হাতছানি দিচ্ছে আরো ৫টি রেকর্ড। মৌসুমের পর মৌসুম যায় কিন্তু রেকর্ডগুলো ভাঙার চেষ্টায় সফল হচ্ছেন না মেসি-রোনালদো। তাহলে চলুন চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেই সব রেকর্ডগুলোর উপর।

ইউরোপিয়ান ফাইনালে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড: রোনালদোর সবচেয়ে প্রিয় টুর্নামেন্ট বলা হয়ে থাকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। ঘরোয়া লিগে যতই দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে যান না কেন ইউরোপের মঞ্চে হাজির হন অন্য এক রোনালদো। তার দুর্দান্ত নৈপণ্যে গত চার আসরের ৩ বারই ইউরোপ সেরা হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই মৌসুমেও শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে রিয়ালের ভরসার নাম রোনালদো।

গত সপ্তাহে পিএসজির বিপক্ষে নকআউট পর্বের মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে জোড়া গোল করেছেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। ১৭৭ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ইউরোপিয়ান শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগিতায় মেসি গোলের সেঞ্চুরি থেকে মাত্র দুই হাত দূরে আছেন।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপের (বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস লিগ) পাঁচটি ফাইনাল খেলে ৭টি গোল করেছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তার চেয়ে বেশি গোল নেই কারোরই। তার রেকর্ডটা আরো অনেকদিনই হয়তো টিকে থাকবে। কারণ ফাইনালের মঞ্চে রোনালদোর গোলসংখ্যা ৪টি। মেসির গোল দুটি। অথচ তারা দুজনই চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগের রূপালি ট্রফিটার স্বাদ পেয়েছেন।

লা লিগায় এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড: স্প্যানিশ লি লিগায় অনেকবারই হ্যাটট্রিক করেছেন রোনালদো ও মেসি। এক ম্যাচে চার-পাঁচটা গোল করার নজিরও তো আছে তাদের। সবমিলিয়ে লিগে ৪০৩ ম্যাচে মেসির গোল ৩৬৯ এবং রোনালদোর ২৮৪ ম্যাচে গোল ২৯৭টি। লা লিগার ইতিহাসে এ দুজনই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু এত গোল উৎসব করার পরও একটা রেকর্ড আজও ভাঙতে পারেননি মেসি-রোনালদো।

লাসলো কুবালার এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭ গোলের রেকর্ডটা প্রায় ৬৬ বছর যাবৎ অক্ষত আছে। বার্সেলোনার জার্সিতে স্পোর্টিং গিজনকে গোলবন্যায় ভাসিয়েছিলেন কুবালা। ২০১২ সালে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৪ গোল করেছিলেন মেসি। বছর তিনেক পর এস্পানিয়লের জালে ৫ বার বল জড়িয়েছিলেন রোনালদো।

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড: ক্লাব পর্যায়ে প্রায় সবকিছু জিতলেও জাতীয় দলের হয়ে তেমন কিছু জেতার নজির নেই লিওনলে মেসির। অপবাদটা ছিল রোনালদোর বেলায়ও। অবশেষে ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে পর্তুগালকে শিরোপা উপহার দিয়ে সেটা কিছুটা হলেও ঘুচিয়েছেন রোনালদো। তবে বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটা এই প্রজন্মের সেরা দুই ফুটবলারের কাছেই অরাধ্য হয়ে আছে। আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপেও ফেভারিটের কাতারে নেই মেসির আর্জেন্টিনা ও রোনালদোর পর্তুগাল।

বিশ্বকাপের মঞ্চে দুজনকেই নিষ্প্রভ দেখা গেছে। ৩টি বৈশ্বিক আসর খেলা মেসির গোল ৫টি। রোনালদোর গোল আরো দুটি কম। যেখানে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসা তাদের চেয়ে আলোকবর্শ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। জার্মানির বিশ্বজয়ী সাবেক স্ট্রাইকারের মোট গোল ১৬টি। ২০১৪ বিশ্বকাপে সালে ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ড রোনালদোর ১৫ গোলের রেকর্ডটা ভেঙেছিলেন ক্লোসা।

এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড: সারা বছর গোল করার সম্ভাব্য সেরা পুরস্কার হিসেবে পিচিচি ট্রফি পেয়ে থাকেন স্কোরাররা। গত কয়েক বছর ধরে মেসি এবং রোনালদোর হাতেই উঠছে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটা। মেসি জিতেছেন চারবার এবং রোনালদো পেয়েছেন তিনবার।

কিন্তু ফেরেঙ্ক ডেকের গড়া এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬৬ গোলের ধারে কাছেও যেতে পারেননি মেসি-রোনালদো। হাঙ্গেরিয়ান লিগে খেলা ডেক ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের এই কীর্তি গড়েছিলেন। তার রেকর্ডের ধারে কাছেও যেতে পারেননি মেসি-রোনালদো। ২০১৪-১৫ মৌসুমে রোনালদো ৪৮ গোল পর্যন্ত করেছিলেন। ২০১১-১২ মৌসুমে মেসি ছুঁয়েছিলেন ৫০ গোলের মাইলফলক।

সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক: সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয় পেলেকে। ফুটবল দুনিয়ার প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পেলে তিনবার জিতেছেন ফিফা বিশ্বকাপ। কেন তিন সর্বকালের সেরা সেটা প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে বহুবারই প্রমাণ দিয়েছেন। কত যে গোল তিনি করেছেন সেটার সঠিক সংখ্যা খুঁজে বেড় করা মুশকিল। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের মালিক তিনিই। পেলে তার সময়কার ফুটবলে ৯২টি হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

এই রেকর্ডটা বোধহয় আজীবনই টিকে থাকবে। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি ও রোনালদো এখনো যে ৫০টি হ্যাটট্রিকই করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৪৯টি হ্যাটট্রিক আছে রোনালদোর। তার চেয়ে ৫টি কম আছে মেসির। স্প্যানিশ লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার হ্যাটট্রিক করেছেন রোনালদো (৩২টি)। যেখানে তার পেছনে থাকা মেসি লিগ হ্যাটট্রিক ২৮টি।