ফিলিস্তিনকে খাবারের মেনু থেকেও মুছে ফেলতে চায়!

ভার্জিন আটলান্টিক নামের এয়ারলাইন্সের একটি খাবারের মেনুতে ‘ফিলিস্তিন’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মেনুর ‘ফিলিস্তিনি স্বাদ-গন্ধে অনুপ্রাণিত’ খাবারের নাম থেকে ‘ফিলিস্তিন’ শব্দটি বাদ দেয়ার পর তোপের মুখে পড়েছে ভার্জিন।

এয়ারলাইন্সটির খাবারের মেনুতে ‘ফিলিস্তিনি স্বাদ-গন্ধে অনুপ্রাণিত’ নামে একটি সালাদ ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সমর্থকদের আপত্তির কারণে তারা ফিলিস্তিনি শব্দটি খাবারের মেনু থেকে বাদ দেয়। 

ভার্জিন আটলান্টিকের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সমর্থকদের অভিযোগ, এয়ারলাইন্সটি ফিলিস্তিনি সমর্থকদের খুশি করতে সালাদের এই নামকরণ করেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালায় এবং ভার্জিনের ফ্লাইট বর্জনের ডাক দেয়।

ইসরায়েল সমর্থকদের চাপের মুখে ভার্জিন আটলান্টিক ‘ফিলিস্তিন’ শব্দটি তাদের খাবারের মেনু থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু তাতে বিতর্ক থেকে পার পায়নি ভার্জিন আটলান্টিক। ফিলিস্তিন শব্দটি বাদ দেয়ার পর আরও তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে তারা।

ফিলিস্তিনের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এয়ারলাইন্সটির বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ এনেছে। তারা এই ঘটনায় তীব্র ভাষায় সমালোচনা করছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এক ইসরায়েল সমর্থক ফিলিস্তিনি নাম সম্বলিত এই খাবারের মেনুটির ছবি তুলে প্রথমবারের মতো টুইটারে পোস্ট করেন। তার অভিযোগ, ফিলিস্তিনিপন্থী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘বয়কট-ডাইভেস্টমেন্ট এন্ড স্যাংশন’ (বিডিএস) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভার্জিন আটলান্টিক তাদের খাবারের মেনুতে এই শব্দটি ব্যবহার করেছে।

ডেভিড গারনেলাস নামের আরেকজন ইসরায়েল সমর্থকও একই রকম অভিযোগ করেন এবং এজন্যে ভার্জিন আটলান্টিক বয়কট করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এর প্রেক্ষিতে এয়ারলাইন্সটি ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ‘ফিলিস্তিনি স্বাদ-গন্ধে অনুপ্রাণিত’ খাবারটির নাম বদলে ‘কুসকুস সালাদ’ রাখা হয়।

এ ঘটনায় পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মুখে পরে ভার্জিন আটলান্টিক। ইসরায়েলি সমর্থকদের আপত্তির কারণে ফিলিস্তিনি নামটি বাদ দেয়ায় এয়ারলাইন্সটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক ফিলিস্তিন সমর্থক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ভার্জিন আটলান্টিক কেন মনে করছে যে খাবারের মেনুতে ফিলিস্তিনি শব্দটি আপত্তিকর। আনা হাবিবটি নামের একজন তার টুইটারে লিখেছেন, ফিলিস্তিন বিরোধীরা ফিলিস্তিনকে শুধু মানচিত্র থেকেই মুছে ফেলতে চায় না, খাবারের মেনু থেকেও মুছে ফেলতে চায়।

তার মতো অনেকেই এই ঘটনাকে ফিলিস্তিন বিরোধী য়ড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ করেন। তারা ইসরায়েলি ফাঁদে পা দেয়ার জন্য এয়ারলাইন্সটির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন।

অবশ্য ভার্জিন আটলান্টিক বিবিসিকে বলেছে, এই সালাদটির প্রধান উপকরণ ফিলিস্তিনি কুসকুস হিসেবে বেশি পরিচিত হওয়ায় তারা এর নামে ফিলিস্তিনি শব্দটি যুক্ত করেছিলেন।

বিতর্কের মুখে এয়ারলাইন্সটির এক মুখপাত্র গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলতে বাধ্য হন যে, আমরা একটি খাবারের নাম নিয়ে কাউকে আহত বা ব্যথিত করতে চাইনি। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যাত্রীদের জন্য নতুন স্বাদের খাবার নিয়ে আসা।

খাবারের নাম নিয়ে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে এ ধরণের উত্তেজনা এটিই প্রথম। এর আগে কখনো এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি।