আর কি কখনো দেখা যাবে এই পাঁচ ক্রিকেটারকে?

উত্থান-পতন যে কোনো খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারেরই একটা অংশ। দুঃসময়ের ক্লান্তিকাল পার করে যেমন অনেকেই ফিরে আসেন চেনা ছন্দে, তেমনি কেউ কেউ হারিয়ে যান কৃষ্ণ গহ্বরে।

নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে খুঁজতে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখা হয়ে যায় অনেকের। বিশ্ব ক্রিকেটে এমন কিছু পরিচিত মুখ আছেন যারা এখন ধুঁকছেন। এখনো স্বপ্ন দেখছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার। কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। এদের মধ্যে হয়তো বাইশ গজে কেউ ফিরতে পারেন চেনা রূপে। হয়তো আর কখনো প্রত্যাবর্তনই হবে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্য চ্যালেঞ্জ। ফর্মহীনতা ও ইনজুরি চ্যালেঞ্জটাকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলে অনেক সময়। তবু হার না মানা মানসিকতা বাঁচিয়ে রাখে আশা। ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা বিশ্বব্যাপী টি-টোয়েন্টি লিগে দ্যুতি ছড়িয়ে অনেকেই ফিরে আসেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কিন্তু ছন্দের ধারাবাহিকতা এবং সামর্থ্যরে অভাববোধ তাদের ভবিষ্যৎকে ফেলে দেয় অনিশ্চয়তার মুখে। যেখান থেকে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এমনই পাঁচজন ক্রিকেটারের কঠিন বাস্তবতা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

গৌতম গম্ভীর: ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে ভারতীয় টপ অর্ডারের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন গৌতম গম্ভীর। কিন্তু অর্ধেকটা পথ পারি দেয়ার পরই শুরু হয় তার দুঃসময়। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে দুবার ফিরে এসেছিলেন জাতীয় দলে, কিন্তু নির্বাচকদের আস্থা রাখার মতো কিছুই করতে পারেননি তিনি। ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করাটা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কারণ ভারতীয় দলে এখন প্রতিভাবান তরুণ ব্যাটসম্যানদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাই এটা বলা বাহুল্য, ২০১৬ সালে রাজকোর্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের রঙিন জার্সিতে গম্ভীরের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন।

যুবরাজ সিং: যুজরাজ সিংয়ের ক্যারিয়ারের গল্পটা বিশ্ব ক্রিকেটের অনুপ্রেরণার বড় একটা উৎস হয়ে থাকবে। বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার ২০১২ সালে হারিয়েছিলেন মরণব্যাধি ক্যান্সারকে। জীবনযুদ্ধে জিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের নিয়মিত খেলোয়াড়ও হয়ে উঠেছিলেন। ফেরার পর বছর দেড়েক সময় ভালোই কেটেছিল তার। বীরদর্পে ধরেছিলেন দলের মিডল অর্ডারের হাল। কিন্তু ফিটনেসের ঘাটতি দলে তার টিকে থাকাটাই কঠিন করে দিয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত ফিটনেস পরীক্ষায় উৎড়ে যান তিনি, কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার মতো ফিটনেস নেই তার। গত বছরের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষবার দেখা গিয়েছিল যুবরাজকে।

হারভজন সিং: একটা সময় হরভজন সিংহ ছাড়া ভারতীয় স্পিনের কথা কল্পনা-ই করা যেত না। সৌরভ গাঙ্গুলি-যুগে রীতিমতো ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠেছিলেন এই অফস্পিনার। সেরা ফর্মে থাকাকালীন ভারতের হয়ে অনেক ম্যাচই জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন উইকেট নেয়ার সক্ষমতা। পরিণাম- ২০১১ সালে ছিটকে যান জাতীয় দল থেকে। দুবার জাতীয় দলে ফিরলেও প্রত্যাবর্তনটা সুখের হয়নি হরভজনের। কুলদীপ যাদব, জুভেন্দ্র চাহালের মতো প্রতিভাবান স্পিনারদের দাপটে ভারতের ওয়ানডে দলেই যেখানে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবিন্দ্র জাদেজার ঠাঁই হয় না সেখানে হরভজনের ফেরার স্বপ্নটা একেবারেই অমূলক। তাই ধারণা করা হচ্ছে ২০১৫ সালের অক্টোবরেই শেষ হয়ে গেছে তার জাতীয় দলের অধ্যায়।

ইয়ান বেল: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরেকবার ইয়ান বেলের প্রত্যবর্তনটা হবে অসম্ভব কোনো ব্যাপার। তবু অদম্য মানসিকতা স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাকে। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ওয়ার্কশায়ার ব্যাটসম্যানের ফেরার লড়াই শুরু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে।

২০১৫-১৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তার ওপর আস্থা হারান নির্বাচকরা। এমনকি অ্যাশেজ সিরিজের জন্য ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দরকার পড়লেও ১১৮টি টেস্ট খেলা বেলকে ডাকেননি নির্বাচকরা। এই বার্তাটাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরেই শেষ হয়ে গেছে বেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

লাসিথ মালিঙ্গা: সোনালি দিনগুলিতে বহুবার প্রতিপক্ষের স্ট্যাম্প উড়িয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা। তার ইয়র্কার সামলাতে গিয়ে অনেক ব্যাটসম্যান ভেঙেছেন পায়ের আঙুল। কিন্তু ফুরিয়ে গেছেন ডানহাতি পেসার। ছয় বছর আগের মালিঙ্গা এখন আর নেই। হাঁটুর ইনজুরি ২০১৬ সাল থেকে শ্রীলঙ্কা দলের পরিকল্পনার বাইরে রেখেছে তাকে। এরপর ফিরলেও কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চেনা ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি মালিঙ্গা। আপাতত শুরু হয়েছে তার কোচিং অধ্যায়। আসন্ন আইপিএলের জন্য মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বোলিং মেন্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাকে। তাই নির্বিঘ্নেই বল যায়, খেলায়াড় মালিঙ্গার দিন শেষ হয়ে গেছে।