খুলেছে সৌদি প্রিন্সদের সেই পাঁচ তারকা কয়েদখানা

সৌদি আরবে দুর্নীতির অভিযোগে দুইশোর বেশি প্রিন্স, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর রিৎস-কার্লটন নামের যে বিলাসবহুল হোটেলে বন্দি রাখা হয়, সেটি সম্প্রতি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। দেশটির রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত এই পাঁচ তারাকা হোটেলটি সম্প্রতি বিশ্বের অভিজাত কয়েদখানা হিসেবে পরিচিতি পায়।

হোটেলটির কর্মীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত হোটেলটিতে অতিথিদের গ্রহণ করা হয়নি। তবে বর্তমানে তা অতিথিদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।

এদিকে সৌদি প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, রিৎস-কার্লটন হোটেলটিতে এখনো ৫৬ জন বন্দি রয়েছেন। তবে দেশটির কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই হোটেলের বাকি বন্দিদের সাধারণ কারাগারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

গত জুনে সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তার ছেলে মুহাম্মদকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করার পর দেশটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। নতুন যুবরাজ মুহাম্মদকে দুর্নীতি দমন কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেন দেশটির রাজা। এরপর থেকেই দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে নামে সৌদি সরকার।

দুর্নীতির অভিযোগে রাজ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্সসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আদেশ জারি করেন মুহাম্মদ বিন সালমান। এরপর এক রাতে তাদের অনেককে বন্দি করে রিৎস-কার্লটনসহ বেশ কয়েকটি অভিজাত হোটেল রাখা হয়।

অভিযোগ ওঠে, মুহাম্মদ বিন সালমান তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এবং প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রিন্সদের দমন করতে দুর্নীতির মতো অভিযোগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। বন্দিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিমানগুলো আটকে রাখা হয় এবং তাদের সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

এ নিয়ে গোটা দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হলে জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সৌদি প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ওই সব ব্যক্তির সঙ্গে সরকারের অর্থনৈতিক দণ্ডে রফা হওয়ার পর অনেককে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত দশ হাজার কোটি ডলারের (১০০ বিলিয়ন) বেশি অর্থ সরকারের হাতে এসেছে। যদিও সরকারি হিসাবে এসব দুর্নীতিবাজদের গোপন অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সৌদি ধনকুবের প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল এবং দেশটির মিডিয়া মোগল ওয়ালিদ আল-ইব্রাহিমও রয়েছেন। এই অভিযানের পর দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছেন ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মুহাম্মদ।

তিনি বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বটে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরে গিয়ে পদত্যাগের ঘোষণার পেছনেও তার হাত আছে বলে মনে করা হয়।