শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব বেশি সময় কাটাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে এর প্রভাব বা কুফল নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা।

social media negative impact on teenager

এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য একটি বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এটি সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। আর এই সমস্যা সমাধানে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটিতে রঙ্গন চ্যাটার্জী নামের একজন চিকিৎসক বলেছেন, কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার এবং তাদের মানসিক সমস্যার মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। এটি এখন ধারণা নয়, প্রমাণিত সত্য। তার কাছে এর প্রমাণও রয়েছে।

সমস্যাটি এতোটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল শিশু কল্যাণ বিশেষজ্ঞ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতার কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে ‘মেসেঞ্জার কিডস’ অ্যাপটি বন্ধ করে দেবার জন্য মার্ক জাকারবার্গের কাছে আহ্বান জানান তারা।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের কারণে বাচ্চাদের অস্বাভাবিক সব মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকি, ১০ বছরের মেয়েরা পর্যন্ত দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে।

সোশ্যাল মিডিয়া যেহেতু বাচ্চাদের মানসিক সমস্যা তৈরি করছে, তাই ১৩ বছরের কম বয়সীদের এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারে উৎসাহিত করাটা ঠিক হচ্ছে না। একি এক ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।

ডা. রঙ্গন চ্যাটার্জী বলছেন, ১৬ বছরের এক কিশোর হাত-পা কাটার পর তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তিনি তার চিকিৎসা করেছেন।

তিনি বলেন, তার এ সমস্যার কারণে প্রথমে বিষণ্ণতা রোধের ওষুধ দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তার সাথে বিস্তারিত কথা বলার পর মনে হয়েছে, তার সমস্যার মূলে বিষণ্ণতা নয়, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের স্বাস্থ্যগত নেতিবাচক প্রভাব।

২০১৭ সালে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী দেড় হাজার কিশোর-কিশোরীর ওপর একটি জরিপ চালায় রয়াল সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ। তার ফলাফলে বলা হয়, ওই সব কিশোর-কিশোরীদের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম। এসব তাদের ভেতরে হীনমন্যতা এবং দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন জানিয়েছে, ইনস্টাগ্রামের কারণে নিজেদের দেহ নিয়ে রীতিমতো মন খারাপ হয়েছে। আর ১৪ থেকে ১৮ বছরের তরুণ-তরুণীদের অর্ধেকই ফেসবুক ব্যবহারের কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা ও অশান্তি বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।

এছাড়া দু-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা জানান, ফেসবুকে অপমান-হয়রানি করার প্রবণতা একেবারে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। তাই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করার প্রবণতা কমিয়ে আনার পর সুফল পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ড. চ্যাটার্জী বলছেন, তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা ওই ছেলেটিকে তিনি একটি সহজ সমাধান দিয়েছিলেন। তা হলো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা কমিয়ে আনা। রাতে ঘুমানোর আগে এক ঘন্টার বেশি ফেসবুক ব্যবহার করা যাবে না। তবে কয়েক সপ্তাহ পর তা বাড়ানো যেতে পারে।

তিনি জানান, এর ফলে ছয় মাসে তার লক্ষণীয় পরিবর্তন হতে শুরু করে। তার মা আমাকে চিঠি লিখে জানালেন যে তার ছেলে স্কুলে গিয়ে এবং স্থানীয়দের সাথে মিশছে অনেক আনন্দ পাচ্ছে।

এই চিকিৎসক বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন করার সময় এসেছে।

লুই থিওডোসিও নামের একজন মনো-দৈহিক চিকিৎসক বলছেন, দু-তিন বছর আগেও তার সাথে বাচ্চাদের ফোন ব্যবহার করা বা টেক্সট করার ঘটনা ছিল খুবই অস্বাভাবিক। কিন্তু এখন এটি খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলছেন, বাচ্চারা ফোন নিয়ে বেশি সময় কাটানোর কারণে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য টিনএজাররা বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা বা অন্য কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। অভিভাবকদের জন্য পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে গেছে। এমন অনেক কেস এসেছে তার কাছে। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট অবশ্য বলছে, এ ব্যাপারে তারা নানা ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে। 

এমন প্রেক্ষাপটে বাচ্চাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন লুই থিওডোসিও। আর তা হলো- বাচ্চাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর রাখা এবং ব্যবহার সীমিত করা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.