আড়াই দিনে টেস্ট হার: বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

নিজেদের জলহাওয়া। মানিয়ে নেয়ার কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। হাতের তালুর মতো চেনা উইকেট। অচেনা উইকেটের অনিশ্চিত আচরণের কোনো শঙ্কা নেই। গত কয়েক বছরে দেশের মাটিতে করা স্মরণীয় সব পারফর্ম্যান্স। ইতিবাচক এতো এতো ব্যাপার থাকার পরও বাংলাদেশ ঢাকা টেস্ট হেরে গেলো মাত্র আড়াই দিনে! লজ্জার চেয়ে যেখানে বিস্ময়ই বেশি। এমন হারের পর স্বাভাবিকভাবে থমথমে ক্রিকেটাঙ্গন। এর মধ্যেই, পাঁচ বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে জানালেন নিজেদের মতামত।

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক, আড়াই দিনে টেস্ট হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় উইকেট একটা বড় কারণ। বাংলাদেশ দল উইকেটের সঙ্গের মানিয়ে নিতে না পারার কারণেই এই ব্যর্থতা। সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছে দলের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিলো। কিন্তু তারা ব্যর্থ হওয়ায় কোনো বড় জুটি গড়ে ওঠেনি এবং এই খেলায় আমরা অনেক পিছিয়ে যাই।’

ঢাকা টেস্টে বাজেভাবে হারের পিছনে নিজেদের ব্যর্থতাকে দায়ী করার পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক কৃতিত্ব দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কান দলকেও। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে টেলএন্ডারদের নিয়ে রোশেন সিলভার জুটি গড়ার বিষয়টিকে সামনে আনেন তিনি। এ ছাড়া, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বড় জুটি গড়তে না পারা এবং প্রথম ইনিংস শেষেই বড় ব্যাবধানে পিছিয়ে পড়াকে হারের কারণ মনে করেন গাজী আশরাফ।

জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের বিশেষ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান বাবু মনে করেন, বাংলাদেশের স্পিনবান্ধব উইকেট তৈরিই ছিলো ভুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে ধরনের উইকেট তৈরি করেছে, তাতেই ভুল হয়ে গেছে। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দল এ ধরনের উইকেটে ব্যর্থ হয়েছিলো বলে আমরা এ রকম উইকেট বানিয়েছিলাম। কিন্তু শ্রীলঙ্কা তো এ ধরনের উইকেটেই খেলে। তাদের বিশ্বমানের স্পিনারও আছে। ব্যাটসম্যানরাও স্পিন খেলতে দক্ষ। সব মিলিয়ে তাদের প্রস্তুতি ভালো ছিলো।’

একই সঙ্গে এই জেষ্ঠ্য ক্রীড়া সাংবাদিক মনে করেন, ঢাকা টেস্টের স্পিনিং উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে ধরনের ব্যাটিং করেছেন, তা এই উইকেটের সঙ্গে মানানসই নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের উইকেট ছিলো স্পিনবান্ধব। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরন দেখে মনে হয়েছে তারা ব্যাটিং স্বর্গে খেলছেন।’

দৈনিক কালের কণ্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক সাইদুজ্জামান আড়াই দিনে টেস্ট হারের ব্যর্থতা বিষয়ে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাকে আমি যতোটা কৃতিত্ব দিবো, সমপরিমাণ ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের। বাংলাদেশ ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ব্যর্থ ছিলো; ফিল্ডিং তো আছেই। ঢাকার কন্ডিশনকে শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে।’

নিউজ জি টোয়েন্টিফোর ডটকমের ক্রীড়া সম্পাদক শামীম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে মনে করেন, স্পিনবান্ধব উইকেটে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ হারাতে পারে বা তাদের বিপক্ষে লড়াই করতে পারে। কিন্তু একই রকম উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পরিকল্পনা কেনো— তা তার কাছে বোধগম্য মনে হয়নি।

শামীম চৌধুরী বলেন, ‘কেমন উইকেট তৈরি করতে হবে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ শুরু থেকেই একটু টালমাটাল ছিলো। স্পিনবান্ধব উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পরিকল্পনা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কারণ তাদের স্পিন আমাদের চেয়ে ভালো। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেশ কিছু ক্যাচ ফেলেছে। এক সাব্বির রহমানই দুই ইনিংস মিলিয়ে চার-পাঁচটি ক্যাচ ফেলেছেন।’

শামীম চৌধুরী মনে করেন, ঢাকা টেস্টে মোসাদ্দেককে দলে না রাখার সিদ্ধান্তও ভুল ছিলো। তার মতে, মোসাদ্দেক আগের টেস্টে দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকেছেন। যা ওই সময়ের প্রয়োজন ছিলো। সেই বিবেচনায় তিনি ঢাকা টেস্ট খেলারও দাবিদার ছিলেন।

ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম মনে করেন, ২০১৬ সাল থেকে ঘরের মাঠে টেস্ট জেতার জন্য বাংলাদেশ যে স্পিনবান্ধব উইকেটে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই সিদ্ধান্তেই একটি বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে। তার মতে, এই সিদ্ধান্তে কেবল স্পিন বোলাররাই সুবিধা পাচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মোহাম্মদ ইসাম বলেন, ‘আমার মনে হয় যখন স্পিনবান্ধব উইকেটে টেস্ট খেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। কোনো ব্যাটসম্যান যখন অফ ফর্মে থাকেন, তখন এ ধরনের উইকেটে ব্যাটিং করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এই টেস্টে সবচেয়ে বাজে ব্যাপার বোধহয় এটাই যে, একটা দল নিজেদের মাঠে নিজেদের ফাঁদে পা দিয়ে ১১০ রানে অলআউট! এ ছাড়া কৌশলগত প্রচুর ত্রুটি আছে। আমার মনে হয় কৌশলগত ভুলগুলো মানসিকতায় বাজে প্রভাব ফেলে। এ কারণেই বাংলাদেশ দলের এতো খারাপ একটা পারফর্ম্যান্স দেখলাম।’

বিশেষজ্ঞদের মতামত দেখুন ভিডিওতে: