কেমন অধিনায়ক হবেন মাহমুদুল্লাহ?

জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্নটা তার অনেক দিনের। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে যে অধিনায়কত্বের মতো গুরুদায়িত্ব এসে পড়বে, তা ভুলেও ভাবেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একদিন পরই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। তার আগে মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রিয়াদ বললেন, অধিনায়কত্বটা এভাবে পাবেন তা একদমই ভাবেননি তিনি।

কিন্তু দায়িত্ব যেহেতু পেয়েই গেছেন, সেহেতু নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই দলের জন্য মনে রাখার মতো কিছু করতে চান তিনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অধিনায়কত্ব দেখার আগে, জনমনে বিরাজ করছে প্রশ্ন— কেমন অধিনায়ক হবেন মাহমুদুল্লাহ?

জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদুল্লাহ কতোটা আলো ছড়াবেন, তা বলে দিবে সময়ই। তবে ঘরোয়া পর্যায়ের অধিনায়ক হিসেবে তিনি ছড়িয়েছেন দারুণ দ্যুতি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত তিন আসরে তার অধিনায়কত্ব দারুণভাবে সমালোচকদের নজর কেড়েছে। তাকে দেখা গেছে দলের বিপদে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে। ২০১৬ সালের বিপিএলের দুটি ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের হয়ে শেষ ওভারে বল হাতে দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি। মাহমুদুল্লাহর ওই রকম সাহসী পদক্ষেপ সে সময় দারুণভাবে প্রশংসিত হয়। গত বিপিএলেও তার অধিনায়কত্ব ছিলো দেখার মতো।

এর আগে, ২০১৫ সালের বিপিএলে মাহমুদুল্লাহর দারুণ অধিনায়কত্বে ফাইনালে উঠে বরিশাল বুলস। ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হারলেও বরিশালের হয়ে রিয়াদের অধিনায়কত্ব পুরো আসরের চমক হয়ে আসে। তখনই জাতীয় দলের ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে রিয়াদের নাম। কিন্তু তার সময় আসছিলো না কিছুতেই।

একই মৌসুমে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকেও নেতৃত্ব দেন মাহমুদুল্লাহ। তার নেতৃত্বে লিগ জিতে দলটি। সে সময় প্রাইম ব্যাংকের কোচ ছিলেন বর্তমান জাতীয় দলের প্রধান কোচের ভূমিকা পালন করা খালেদ মাহমুদ সুজন। এ দুজন এবার জুটি গড়লেন জাতীয় দলের হয়ে।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল শেষে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদুল্লাহকে যথেষ্ট যোগ্য মনে করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস মাহমুদুল্লাহ অধিনায়ক হিসেবে ভালো করবে। দলকে নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট যোগ্যতা আছে তার।’

মাহমুদুল্লাহ নিজে তার অধিনায়ক হওয়া নিয়ে বলেন, ‘যেভাবে অধিনায়কত্ব পেয়েছি, সেভাবে চাইনি অবশ্যই। কারণ সাকিব আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ওকে মিস করা আমাদের জন্য বিরাট ক্ষতি। তারপরও আমরা সবাই দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। সুতরাং আমরা সবাই রোমাঞ্চিত।’

নিজের অধিনায়ক সত্তার দর্শন নিয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘অধিনায়ককে মাঠে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমার মনে হয়, এ জন মাথা ঠাণ্ডা রাখা জরুরি। সেটা না হলে সিদ্ধান্তগুলো এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে। আমি ঘরোয়া পর্যায়েও যখন অধিনায়কত্ব করি, চেষ্টা করি মাথা ঠাণ্ডা রাখার। এটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে দলকে সব সময় অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করবো।’

সব মিলিয়ে মাহমুদুল্লাহ মনে করেন, তিনি একজন ঠাণ্ডা মাথার অনুপ্রেরণাদায়ক অধিনায়ক। নিজের এই সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ যদি মাঠে ঘটাতে পারেন, নিঃসন্দেহে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় হয়ে উঠতে পারেন। এতে নিশ্চয়, মাহমুদুল্লাহ কেমন অধিনায়ক— এই প্রশ্নের উত্তরও মিলে যাবে!