উইকেট নিয়ে মাশরাফির অসন্তোষ, কিউরেটর কতোটা দায়ী?

ত্রিদেশীয় সিরিজের উত্তেজনা শেষ। বাংলাদেশ দল এখন ব্যস্ত টেস্ট সিরিজ নিয়ে। দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। যাদের কাছে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজারা। ওই হারের পর উইকেট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন অধিনায়ক। কিন্তু আসলেই কি উইকেটের দায় আছে? থাকলে তার জন্য কিউরেটর কতোটা দায়ী?

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কাছে ৭৯ রানে হেরে যায়। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২২১ রান করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ জবাব দিতে নেমে গুটিয়ে যায় ১৪২ রানে। অথচ এই উইকেটেই একই সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২০ রান করে ১৬৩ রানর জিতেছিলো। সেই উইকেট কেনো এমন আচরণ করলো?

ফাইনাল হারের পর স্বভাবতই অত্যন্ত বিষণ্ন ছিলেন মাশরাফি। এর মধ্যেই তাকে উইকেটের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘আমরা আসলে আসরের শুরু থেকেই হাই স্কোরিং উইকেট চেয়েছিলাম। আমরা সব সময় ভালো উইকেটে খেলতে চেয়েছি, যেখানে অন্তত ২৭০-২৮০ রান হবে।’

মাশরাফি সরাসরি বলেননি যে, উইকেট তার পছন্দ হয়নি। তবে যা বলেছেন যে, তাতে উইকেট নিয়ে অসন্তোষটা ঠিকই প্রকাশ করেছেন। সরাসরি কিছু বললে হয়তো, তার সাথেও ওই রকম কিছু হতে পারতো, বিপিএলের উইকেটের সমালোচনা করে তামিম ইকবালের সাথে যা হয়েছিলো। উইকেটের সমালোচনা তামিমের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা গোনার বিষয়টি নিশ্চয় এখনো ভুলে যাওয়ার মতো পুরোনো হয়নি!

বিশ্বজুড়েই স্বাগতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি সামর্থ্য অনুসারে উইকেট বানায়। ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে এটা খুবই চর্চিত এক ব্যাপার। তারপরও ফাইনালের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে উইকেট কেনো বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের মন মতো হলো না?

প্রশ্নটি সামনে এনে মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকেই প্রথম ‘দোষী’ মনে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ফাইনালের আগে উইকেটে পানি না ঢালার নির্দেশনা ছিলো তার প্রতি। কিন্তু গামিনি সেই নির্দেশনা না মেনে উইকেটে পানি ঢেলেছেন। উইকেটের বিষয়ে ‘স্পর্শকাতর’ কিছু তথ্যও নাকি তিনি তার নিজ দেশের দল শ্রীলঙ্কাকে সরবারহ করেছেন।

এই অভিযোগ দুটি নিতান্তই অভিযোগ এবং স্বপক্ষে কোনো প্রমাণও নেই। আবার গামিনি যে এই অভিযোগ অস্বীকার করবেন বা এর পক্ষে প্রমাণ দিবেন, সে উপায়ও নেই। তো এই পরিস্থিতিতে কিউরেটরকে তো উইকেট নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। বিসিবি কি তা করবে?
বিসিবির একটি বিশেষ সূত্র বলছে, এরই মধ্যে ফাইনালের উইকেট নিয়ে গামিনিকে প্রশ্ন করা হয়েছে। উইকেটের পানি ঢালা বিষয়ে নাকি তাকে কারণ দর্শাতেও বলেছে বিসিবি।

গামিনি আসলেই উইকেটে পানি ঢেলেছিলেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে তাকে সন্দেহ করাটাও বোধহয় একেবারে অযৌক্তিক কিছু নয়। কারণ তিনি নিজে শ্রীলঙ্কান আর ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তারই দেশ। সুতরাং কোনো কারণে বিসিবি ছাড়া অন্য কোনো পক্ষের প্ররোচনায় তিনি প্রভাবিত হতেই পারেন। কিউরেটরদের উইকেট নষ্ট করা বা তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় এ ধরনের কিছু করা তো একেবারে অবিশ্বাস্য কিছু নয়। গত বছর ভারতে একজন কিউরেটর পিচ গড়াপেটা করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন।

সুতরাং বিসিবি যদি ফাইনালের উইকেটের আচরণ কেনো প্রত্যাশার অনেক বাইরে ছিলো, তা নিয়ে তদন্ত করে তাহলে সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই ভালো। একই সাথে কিউরেটর যদি এই ঘটনায় কোনোভাবে দোষী হন, তাহলে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সহজ হবে।