ব্যাটসম্যানদের 'মৃত্যুকূপে' শেষ হাসি ভারতের

২৫ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কোন ধরনের সিরিজ জিততে পারেনি ভারত। এবার সেই আক্ষেপ ঘুঁচানোর মিশন নিয়েই আফ্রিকায় পা রেখেছিলো বিরাট কোহলিরা। নাহ, পারেনি কোহলির উড়ন্ত ভারত। টেস্টের লড়াইয়ে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে খুঁইয়েছে সিরিজ। তবে শেষ ম্যাচে জোহানেসবার্গে ব্যাটসম্যানদের তৈরি করা মৃত্যুকূপে জয় পেয়েছে ভারত।

জোহানেসবার্গের এই পিচকে ব্যাটসম্যানদের মৃত্যুকূপ বলা হচ্ছে কেননা, লাল বলটা কখনো বাউন্স হচ্ছে আবার কখনো একদম লো হয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকা আগের দুই টেস্টেও এমন পেস সহায়ক উইকেট বানিয়েছিল। তবে জোহানেসবার্গের পিচটা যেন একেবারেই আলাদা। টেস্টের তৃতীয় দিনে লাফিয়ে ওঠা বল কখনো কখনো আঘাত হানছে ব্যাটসম্যানের কোমরে, কখনো বুকে আবার কখনো হেলমেটে। তৃতীয় দিনে বুমরার একটি বলতো আঘাত হানে ডিন এলগারের মাথায়। এরপর মাঠের অবস্থা বিবেচনা করে আগেভাগেই খেলা বন্ধ করা হয়। চতুর্থ দিনেও খেলা হবে কি না সেটা নিয়ে ছিল সংশয়। তবে শেষ পর্যন্ত খেলা মাঠে গড়িয়েছে। আর শেষ হাসি হেসেছে ভারতীয়রা। তবে ভারত বধে আফ্রিকার এমন পিচের সমালোচনা চলছে চারদিকে।

তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৪১ রান। কিন্তু ভারতীয় পেসারদের তোপে ভিলিয়ার্স-আমলার গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৭৭ রানেই। ব্যাটসম্যানদের জন্য দুর্বোধ্য এই পিচে একাই লড়ে গেছেন ডিন এলগার। তার সাহসী অপরাজিত ৮৬ রানও বাঁচাতে পারেনি আফ্রিকাকে। মোহাম্মদ সামির এক বিধ্বংসী স্পেলে ভেঙ্গে গেছে সকল আফ্রিকান প্রতিরোধ। ভারত জয় পেয়েছে ৬৩ রানে।

চতুর্থ ইনিংসে ২৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই মাত্র ৫ রানে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এইডেন মাকাররামকে হারায় আফ্রিকা। এরপর এই কঠিন পিচেও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে হাশিম আমলা আর ডিন এলগার। এই দুইজনের ১১৯ রানের জুটি ভারতকে হোয়াইট ওয়াশের স্বপ্ন দেখায়। তবে ব্যক্তিগত ৫২ রানে ইশান্ত শর্মার বলে দলীয় ১২৪ রানে আউট হন আমলা। তখনো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছিল আফ্রিকার দখলে।

আমলা আউট হওয়ার পর কোন ব্যাটসম্যান টিকে থাকতে পারেনি। ৮৬ রানে অপরাজিত থাকা ডিন এলগার যেন চেয়ে চেয়ে দেখলেন সতীর্থদের যাওয়া-আসা। আফ্রিকা যখন জয়ের সুবাস পাচ্ছিল তখন এই দুর্বোধ্য পিচে জেগে উঠলেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সামী। তার ভয়ঙ্কর এক স্পেলে ১২৪ থেকে মাত্র ৫৩ রান যোগ করেই শেষ হয় আফ্রিকার ইনিংস।

আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ডিন এলগার আর হাশিম আমলা ছাড়া বলার মতো রান করতে পারেননি কেউই। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে সামী পেয়েছেন ৫ উইকেট, বুমরাহ আর ইশান্ত শর্মা পেয়েছেন দুটি করে উইকেট।

জোহানেসবার্গের এই জয়ের ফলে আফ্রিকার মাটিতে তৃতীয় জয় পেল ভারত। এর আগে ২০০৬ এবং ২০১০ সালে আফ্রিকায় গিয়ে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক জয় এখন ভারতের। প্রোটিয়াদের মাটিতে পাকিস্তান জয় পেয়েছে দুটি, শ্রীলঙ্কা একটি এবং বাংলাদেশ এখনো কোন জয় পায়নি। আরেক মজার তথ্য হলো, আফ্রিকার জোহানেসবার্গে টেস্টে কখনোই হারেনি ভারত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত : ১৮৭ ও ২৪৭
আফ্রিকা : ১৯৪ ও ১৭৭
ফলাফল : ভারত ৬৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ভুবনেশ্বর কুমার
ম্যা অব দ্য সিরিজ : ভেরনন ফিল্যান্ডার