জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে বছর শুরু বাংলাদেশের

চেনা প্রতিপক্ষকে সামনে পেয়ে বড় জয় দিয়েই ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ। সোমবার মিরপুরে এক বছরেরও বেশি সময় পর ওয়ানডে খেলতে নেমে মাশরাফি-সাকিবরা জিতেছেন আট উইকেটে। যার মাধ্যমে ত্রিদেশীয় সিরিজে একটা দুর্দান্ত শুরু পেলো স্বাগতিকরা। অবশ্য জয়ই এই ম্যাচের একমাত্র প্রাপ্তি নয়।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মোস্তাফিজ-সাকিবদের সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৭০ রানে। জবাব দিতে নেমে দারুণ শুরু করেন তিন বছর পর জাতীয় দলে ঢোকা এনামুল হক বিজয়। ইনিংসের চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে বিজয়কে স্ট্রাইক দেন তামিম। বিজয় প্রথম বলেই মেরে দেন চার।

নিজের খেলা তৃতীয় বলে আরো একটা চার মারেন বিজয়। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে হঠাৎ ইনজুরিতে পড়ে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরে ঘরোয়া পর্যায়ে দারুণ পারফর্ম করলেও তাকে আর দলে ফেরানোর প্রয়োজন মনে করেননি সে সময়ে বাংলাদেশের কোচ থাকা চান্দিকা হাথুরুসিংহে। বিজয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো ‘স্বার্থপরতার’।

তিন বছর পর আবার ওয়ানডে দলে ঢুকে ওই অভিযোগটাই যেনো আগে খণ্ডাতে চাইলেন তিনি! ১৪ বল খেলে ১৯ রানে আউট হওয়ার আগে বিজয় চার মেরেছেন চারটি। তার প্রতিটি শটেই ছিলো ‘দেখিয়ে দেয়ার’ প্রবণতা। যা প্রয়োজনের তুলনয়া একটু বেশিই ছিলো এবং কখনো কখনো তার এই ধরনকে মনে হয়েছে দৃষ্টিকটু।

১৭০ রানের জবাব দিতে নেমে দলীয় ৩০ রানে বিদায় নেন বিজয়। এতে অবশ্য তেমন কোনো সমস্যায়ই পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। তিন নম্বরে খেলার লাইসেন্স পাওয়া সাকিব দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে গড়েন ৭৮ রানের জুটি। যা আরো বড় হবে বলেই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৭ রানে সিকান্দার রাজার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি।

সাকিবের বিদায়ের পর ইনিংসের ভার নেন তামিম-মুশফিক। তারা ৬০ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। তামিম ইকবাল ৮৪ রান করে থাকেন অপরাজিত। আর মুশফিক অপরাজিত থাকেন ১৪ রান করে। ২৮ ওভার তিন বলেই শেষ হয় ম্যাচ।

এর আগে সাকিব-সানজামুলের স্পিন এবং মোস্তাফিজের স্বরূপে ফেরার আভাস ছড়ানোর ইনিংসে জিম্বাবুয়ে সমর্থ্য হয় মাত্র ১৭০ রান করতে। ওয়ানডে ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার দুই পাশ থেকেই স্পিন দিয়ে ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব। পরে আরো একটা উইকেট নেন তিনি।

তিন উইকেট সাকিব বাংলাদেশের ইনিংসে সেরা বোলার হলেও আলোর ছটা পড়ে গিয়ে রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজের উপর। এদের মধ্যে রুবেল ৪৭ ওভারে পরপর দুই উইকেট নিয়ে মাশরাফির পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি পেসার হিসেবে ১০০ উইকেট পূরণ করেন। সব মিলিয়ে তিনি পঞ্চম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন।

আর মোস্তাফিজের উপর আলো পড়ার কারণ তার পুরোনো রূপে ফেরার আভাস। এ দিন কাটার ও স্লোয়ারের মোহনীয় রূপে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের মাথা ঘুরিয়ে ছেড়েছেন তিনি। ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৯ রান দিয়ে উইকেট নেন মোস্তাফিজ। যে দুটি উইকেট তিনি নিয়েছেন, দুটোই ছিলো কাটারের ফল। বছরের প্রথম ওয়ানডেতে মোস্তাফিজের এমন রূপের চেয়ে আর কী-ই বা আশা করতে পারতো বাংলাদেশ! জয়ের কথা বাদ দিলে এটাই হয়তো এই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি।

অনেকের হয়তো অনেক আশাই ছিলো। কিন্তু মিরপুরে সেটার প্রমাণ পাওয়া গেলো না। কারণ এ দিন যে শেরে বাংলার গ্যালারির বেশির ভাগ অংশ ফাঁকাই পড়ে থাকলো। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই হয়তো দর্শকদের মধ্যে রোমাঞ্চ খুব একটা ছিলো না। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর হয়তো ক্রিকেট উন্মাদনা ঠিকই বাড়বে। তা সমান্তরালে মাঘের শীত বাড়ার যতোই শঙ্কা থাকুক না কেনো!