সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার 'পরামর্শ' শিক্ষামন্ত্রীর

'শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নয়, মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করেন। তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস আমার নেই। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনীয় হয়ে খাবেন।' ২৪ ডিসেম্বর, রোববার শিক্ষা ভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তাদের ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থার ওপর প্রশিক্ষণ শেষে ল্যাপটপ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে দুর্নীতি প্রসঙ্গে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

দেশের ৩৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ডিআইএ কর্মকর্তারা সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেন। তাদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণের বিষয়টিকে শিক্ষামন্ত্রীর নিষ্ঠুর বাস্তবতা বলেই মনে হয়েছে।

মন্ত্রী তার বক্তব্যের প্রথমে কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের পর ঘুষের বিনিময়ে প্রতিবেদন দেয়ার সমালোচনা করে অনেকটা অসহায়ভাবেই তিনি 'সহনীয় মাত্রায়' ঘুষ খাওয়ার অনুরোধ করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলে খাম (ঘুষের টাকা ভরা খাম) তৈরি করাই থাকে। গেলে খামটা আপনার হাতে ধরায় দিবে। আপনি খেয়ে দেয়ে (খাম পকেটে ভরে) চলে আসবেন।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সব জায়গায় যে বলেছি অপচয়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। এটা আমাদের বলতে হবে। কিন্তু আমি ইডির (ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট) সভায় বলছি, আপনারা দয়া করে ভালো কাজ করবেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়্যা খাবেন। অসহনীয় হয়ে বলা যায় আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অবাস্তবিক কথা হবে।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘নানা জায়গায় এমন হচ্ছে (ঘুষ গ্রহণ), সব জায়গাই এমন হইছে। খালি যে অফিসাররা চোর তা না, মন্ত্রীরাও চোর। আমিও চোর। এ জগতে এমনই চলে আসছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’

এর আগে গত ২ অগাস্ট ডিআইএ’র অধীন ৩৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে গণশুনানির কার্যক্রম উদ্বোধনকালেও ঘুষ নিয়ে কথা বলেছিলেন মন্ত্রী। সেবার সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে মন্ত্রী বলেছিলেন, 'পরিদর্শনে গিয়ে কেউ কেউ টাকা চেয়েছে, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। খাম রেডি হয়ে থাকে, অনেকে শুধু সেই খাম আনতে যায়, এখনও এটা হচ্ছে অস্বীকার করি না।’

রোববার শিক্ষামন্ত্রী তার দেয়া বক্তব্যে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে বলেন,‘যারা ঘুষ খান, ইজ্জত থাকতে চলে যান। যারা ভালো কাজ করবেন, তাদের পুরস্কার দেব।’ বিভিন্ন কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার ফলে এই সরকারের আমলে দুর্নীতি কমেছে। আগামীতে সব কার্যক্রম ডিজিটাল হলে দুনীর্তির হার আরো কমে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।