প্রার্থী 'ভণ্ড পীরের মুরিদ', রংপুরে বিএনপির ভরাডুবি এ কারণেই!

রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের অর্ধ লক্ষাধিক ভোট রয়েছে। বিএনপিরও আছে ৩০-৩৫ হাজারের মতো ভোট। তার সঙ্গে হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলোর সহানুভূতি বা মৌন সমর্থন রয়েছে বিএনপির প্রতি। তাই স্বভাবতই নির্বাচনে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষগুলোর ভোট যাবে বিএনপি প্রার্থীর বাক্সে- এমন সমীকরণ স্বাভাবিকই ছিল। আর এতে জমে উঠত রংপুরের নির্বাচন। সবাই আশাও করেছিল নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই দেখার। কিন্তু সেটি আর হলো না।

নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিএনপি প্রার্থী বাবলা 

নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি প্রার্থীর। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন ধরণের তথ্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা ছিল বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা ঢাকার বিতর্কিত পীর দেওয়ানবাগীর একজন মুরিদ। অনেকেই তাকে রংপুর অঞ্চলের ‘দেওয়ানবাগী পীরের খলিফা’ হিসেবেও জানে।

বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলনসহ প্রায় সব ইসলামী দল ও আলেম সমাজের কাছে দেওয়ানবাগী পীর একজন 'ভণ্ড' হিসেবেই পরিচিত।

যে কারণে জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের সমমনা ইসলামী দলগুলো বাবলাকে এক প্রকার বয়কট করেছে। তার প্রচারণায় জামায়াত বা ইসলামি কোনো দলের নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। আর বাবলাও প্রয়োজন মনে করেননি তাদেরকে কাছে টানার।

এদিকে জামায়াত নেতাদের নিয়ে প্রচারণায় নামলে ‘যুদ্ধাপরাধীর গন্ধ’ আসতে পারে-এমন আশংকায় তাদের তেমন পাত্তাই দেননি বিএনপির এ প্রার্থী। তিনি মনে করেছেন জামায়াতের নিজেদের প্রার্থী না থাকায় নীরব ভোটগুলো এমনিতেই তার বাক্সে পড়বে। তার এমন ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

এছাড়াও দলীয় সমন্বয়হীনতার কারণেও রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বাবলা প্রত্যাশিত ভোট থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।

নারীরাও ভোটারদেরও ভোট পাননি বাবলা: বহু বিবাহের কারণে নারী ভোটারদের কাছেও বাবলা একজন অসাধু মানুষ হিসেবে পরিচিত। কারণ, সামাজিকভাবে অনেকেই জানেন বাবলা ছয়টি বিয়ে করেছেন। এমন অপপ্রচারের কারণে নারী ভোটাররাও তাকে পছন্দ করেননি বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপি প্রার্থী বাবলার বক্তব্য: এসব অভিযোগের বিষয়ে কাওছার জামান বাবলাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ আমি দেওয়ানবাগ পীর সাহেবের মুরিদ নই। আমি রাজারবাগ পীর সাহেবের মুরিদ। আর আমি ৬টি বিয়ে করিনি, শরীয়তসম্মতভাবে ৩টি বিয়ে করেছি।’

জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর ভোট না পাওয়া প্রসঙ্গে বাবলা বলেন, ‘রংপুর সিটিতে জামায়াতের প্রায় ৬০-৬৫ হাজার ভোট আছে। বিএনপির আছে ৪০-৫০ হাজার। আমরা নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে। সমন্বয় না থাকার কারণেই মূলত ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।’

বাবলা আক্ষেপ করে বলেন, ‘২০১২ সালের নির্বাচনে আমি এককভাবে নির্বাচন করে ২৫ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার দলীয় প্রতীক নিয়েও আশানুরূপ ফল পাইনি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য: নির্বাচনে ভরাডুবি প্রসঙ্গে রংপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এখানে সাংগঠনিকভাবে কোনো দুর্বলতা আছে বলে আমি মনে করি না। বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ দলগুলো কাজ করেছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির আরও ভালো করা উচিত ছিল। তবে আমাদের প্রচারণায় ঘাটতি ছিল। বিএনপির আরও সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানো উচিত ছিল। আর বিপরীতে সরকারের কারণেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে আমরা পেছনে পড়েছি।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত রসিক নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির (জাপা) মুস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু পান ৬২ হাজার ৪০০ ভোট। বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা পেয়েছেন মাত্র ৩৫ হাজার ১৩৬টি ভোট।