মহিউদ্দিনের জন্য কেন চট্টগ্রামের কান্না?

চট্টগ্রামের মানুষের বিপদে-আপদে, সুখ-দুঃখে সবসময় পাশে ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। তাই তিনি মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব পেয়েও চট্টগ্রাম ছেড়ে যাননি।

মন্ত্রী হলে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতে হয়, অর্থাৎ চট্টগ্রাম ছেড়ে থাকতে হবে-সেজন্য তিনি মন্ত্রীত্বও গ্রহণ করেননি। তার কাছে চট্টগ্রামের মানুষই ছিল সব। এজন্য রাজনৈতিক বিরোধীরাও তাকে আলাদাভাবে শ্রদ্ধা করতো। এই মানুষটিকে হারিয়ে এখন কাঁদছে চট্টগ্রামবাসী। কাঁদছে চট্টগ্রাম।

কেন তার প্রতি চট্টগ্রামবাসীর এত ভালবাসা: কোথাও কোনো সমস্যা হলে তার সমাধানে সবার সামনে থাকতেন চট্টলদরদী এ মানুষ। জনগণের পাশে দাঁড়ানো ছিল তার এক প্রকার নেশা।

একদিনের ঘটনা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সিএনজি স্টেশন মধ্যরাতে বন্ধ। দাঁড়িয়ে আছেন শত শত সিএনজি ড্রাইভার। আর গ্যাস না নিতে পারলে দিনে গাড়ি চালাবেন কী করে? এজন্য রাতভর অপেক্ষা করলেও গ্যাস নিয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতির কথা শুনে মধ্যরাতেই সেখানে হাজির হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ড্রাইভারদের গ্যাস দেয়ার নির্দেশ দেন।

কালুরঘাটে কেডিএস গার্মেন্টে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন মানুষ পুড়ে মারা যায়। কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে অন্য ধর্মের মানুষ তা বুঝার উপায় নেই। একসঙ্গে এতগুলো লাশ কোথায়, কীভাবে সৎকার করা যা তা নিয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। এমন সময় ছুটে যান সবার প্রিয় নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। বায়েজিদ এলাকায় তাদের সবার দাফনের ব্যবস্থা করেন।

বন্দরটিলা এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার দখল নিয়ে একবার নৌ-সেনাদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হন। ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত লাশ। কেউ সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ভয়ে সবাই কম্পমান। দরজা লাগিয়ে সবাই ঘরে, কেউ বের হচ্ছে না। এসময় মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের বাইরে ছিলেন। কিন্তু খবর পেয়ে চট্টগ্রামে দ্রুত চলে আসেন তিনি। ফিরেই ছুটে যান বন্দর টিলায়। নিজ হাতে তিনিই লাশগুলো উদ্ধার করে ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।

মেথরদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা: নগরীর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের (মেথর) তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। সবচেয়ে অবহেলিত সেবক বা মেথরদেরও পাশে ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থার দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। এছাড়াও মেথর বা সেবক কলোনির বাসিন্দাদের খানিকটা উন্নত জীবনের জন্য বাস্তবমুখী কিছু পদক্ষেপও রয়েছে তার। মাঝে মাঝে তিনি নিজেই ছুটে যেতেন বিভিন্ন সেবক কলোনিতে। তাদের খোঁজখবর নেয়া বিয়ে বা যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া তো মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

যে কারণে চট্টগ্রামেই তার চিকিৎসা: চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি খোরশেদ আলম সুজন টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী সব সময় নগরবাসীর সুখে-দুখে পাশে ছিলেন। ১৭ বছর মেয়র থাকাকালে যেমন ছিলেন তেমনই মেয়র না থাকলেও তিনি সবার পাশে ছিলেন।

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকায় আনার পর সেখানে তিনি থাকতে চাননি। তাকে যারা দেখতে ঢাকায় গেছেন তাদের কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন চট্টগ্রামের খবর। চট্টগ্রাম ফিরে আসার আকুতি তাড়িয়ে বেড়াতো। এ কারণেই মূলত ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রাম নিয়ে কিডনির ডায়ালাইসিস করানোসহ ফলোআপ চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’