নিজের ‘পাওনা’ বুঝে চাইলেন মেসি!

‘একেক যুগে একেক জন সেরা ফুটবলার থাকে। পেলে তার যুগের সেরা, ম্যারাডোনা তার যুগে, সেভাবে মেসি মেসির যুগে সেরা’ কথাটা বলেছিলেন স্প্যানিশ কোচ পেপ গার্দিওলা। বার্সেলোনার সাবেক কোচের এই কথার চেয়েও বাড়িয়ে বলেছেন অনেকে। ফুটবলের জাদুকর, ভিনগ্রহের ফুটবলার কত নামই তো লিওনেল মেসির পাশে বসিয়ে দিয়েছেন কতজন।

যেটাকে বাড়াবাড়ি বলার মানুষ খুব বেশি নেই। আর থাকবেই বা কেনো, ছন্দে থাকা অবস্থায় বল নিয়ে যখন দৌড়াতে থাকেন মেসি, মনে হয় দুনিয়ার শীর্ষ কোন শিল্পী এক মনে শ্রেষ্ঠ ছবিটি আঁকছেন। বাঁ-পায়ের কারুকাজ, অভাবনীয় ড্রিবলিংয়ে সবুজ ঘাসের চাদরের উপর যেন ফুল ফুটান মেসি। বার্সেলোনা, আর্জেন্টিনার জার্সিতে যা করেছেন ফুটবলই যেন ঋণী হয়ে পড়েছে মেসির কাছে!

এক মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন, এক পঞ্জিকাবর্ষের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন, ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন, আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন, স্প্যানিশ লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন, আরো কত রেকর্ড গড়েছেন মেসি নিজেরই হয়তো ইয়ত্তা নেই।

ক্যারিয়ারে ৬’শর বেশি গোল করেছেন। গোল বা রেকর্ডের সংখ্যা বাদ দিলেও বল পায়ে মাঠে যে জাদু দেখান মেসি সেটা কি ভুলতে পারবে ফুটবল? ফুটবলের প্রচার, প্রসার, জনপ্রিয়তা বাড়াতে এই মেসির বড়ই অবদান। কিন্তু এর বড় কোন প্রতিদান এখনো দিতে পারেনি ফুটবল। আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি বলেছিলেন, ফুটবলের কাছে মেসির পাওনা রয়ে গেছে বড় একটি শিরোপা।

গত বিশ্বকাপে ফাইনালে গিয়েও পাওনা বুঝে পাননি মেসি। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে হারতে হয়েছে জার্মানির কাছে। তার আগে ও পরে পরপর দুই কোপা আমেরিকার ফাইনালে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন মেসি। আগামী বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে সুযোগ আছে আরও একটি। ৩২ বছর বয়সে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন মেসি। তার পরবর্তী বিশ্বকাপে বয়সের ভারে পারফরম্যান্স কোথায় গিয়ে ঠেকবে তার ইয়ত্তা নেই। ফলে আগামী বিশ্বকাপেই মেসির পাওনা বুঝে পাওয়ার সর্বশেষ সুযোগ।

পাবেন তো মেসি? আর্জেন্টিনা জাদুকর দাবি নিয়েই বললেন, তার পাওনা বুঝিয়ে দিক ফুটবল। কোচ সাম্পাওলির কথা মনে করিয়ে দেয়া হলে মেসি বলেছেন, ‘আমি আশা করি, ফুটবল আমার এই পাওনাটা পরিশোধ করে দিবে। আমি শুনেছি, কোচ এটা বলেছে। সাম্পাওলি এটা আমাকেও বলেছেন।’

কিন্তু পাওনা বুঝে নেয়ার জন্য তৈরি তো মেসি? রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল আর্জেন্টিনার। ইকুয়েডরের বিপক্ষে বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে গিয়ে হ্যাটট্রিক করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিয়েছেন মেসি। বাছাই পর্ব পেরুতেই যাদের এতো টানাটানি তারা বিশ্বকাপে গিয়ে কি করবে, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কিন্তু মেসি আস্বস্ত করলেন ভক্তদের।

মেসি বলেন, ‘ইকুয়েডর ম্যাচের পর আমাদের দল নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এই ম্যাচটাকে ঘিরে যে ভয় আর দুশ্চিন্তা ছিল আর্জেন্টিনা সেটা দূর করেছে।’