রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএসএফ ডিজিকে মমতার ধমক!

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘পুশব্যাক’ করার কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচণ্ড ধমক খেয়েছেন বিএসএফ ডিজি কৃষ্ণকুমার শর্মা।

এদিকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের পুশব্যাক করার কেন্দ্রীয় নীতিতে উত্তপ্ত হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ৫ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক। কলকাতায় অনুষ্ঠিত বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও আনন্দবাজার পত্রিকার।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বনান্দ্য সোনোয়াল, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা। আর মেঘালয় ও ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি এ বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়াও বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সির প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, বৈঠকের এক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করার কথা বলেন বিএসএফের ডিজি কৃষ্ণকুমার শর্মা। এসময় তাকে ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এক পর্যায়ে বাদানুবাদ শুরু হয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ হস্তক্ষেপ করে বিষয়টির সমাপ্তি টানেন।

খবরে বলা হয়, বৈঠকের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় নীতির ব্যাখ্যা। বৈঠকে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএসএফের ডিজি শর্মা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে তাদের ধরে আনতে গেলে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। সেই কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সীমান্তে পুশব্যাক করার নীতি নেওয়া হয়েছে। গত তিন বছরে কয়েকশ’ শরণার্থীদের এভাবে পুশব্যাক করা হয়েছে।’

বিএসএফের ডিজি শর্মার এ বক্তব্য শুনেই ক্ষেপে যান মমতা। তিনি তাকে ধমক দিয়ে তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। মমতা বলেন, ‘এটা কোনও মানবিক নীতি হতে পারে না। এভাবে কেন পুশব্যাক করা হচ্ছে? জাতিসংঘও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশেষ নীতি গ্রহণ করেছে। মানবিকভাবেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘দমদম জেলে ৪৪ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি হোমেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী ও শিশু রয়েছে। তাদের কোনোভাবেই পুশব্যাক করা হবে না। এরকম অমানবিক কাজ রাজ্য করবে না।’

মমতার বক্তব্যের পরও বিএসএফের ডিজি শর্মা পুশব্যাকের তত্ত্বেই অনঢ় থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দেয়ারও চেষ্টা করেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ বিএসএফ ডিজিকে চুপ থাকতে বলেন। তিনি আর কিছু বলতে সাহস পাননি। এভাবেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যের কেউ কেন্দ্রের রোহিঙ্গা নীতি নিয়ে কোনও সাড়াশব্দ করেনি।

তবে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে কোনও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ সতর্ক রয়েছে, অনুপ্রবেশ রুখতে হবে।’ রাজনাথ বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। কিন্তু তাদের সীমানা ব্যবহার করে কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, দ্য হিন্দু ও আনন্দবাজার পত্রিকা