তার ক্রিকেটার হওয়ার গল্পটা অন্যদের মতো নয়। আসলে তার ক্রিকেটার হওয়ারই কথা ছিলো না। জীবনের প্রথম দিকে, যখন কেবল বুঝতে শিখছেন, তখন হতে চেয়েছিলেন যুদ্ধবিমানের পাইলট। বিমানবাহিনীর কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু মেডিকেল টেস্টে ব্যর্থ হয়ে সিদ্ধান্ত নেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী হবেন। জন্মভূমি পাকিস্তান ছেড়ে তখন তিনি চলে যান স্কটল্যান্ডে। সেখানে সফটওয়্যার প্রকৌশলে পড়ালেখা শেষ করেন। এই সব কিছুর পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি দুর্ণিবার ঝোঁকটা সব সময়ই ছিলো। সেই ঝোঁকই পড়ালেখা শেষ করার পর তাকে নিয়ে আসে ক্রিকেট মাঠে। আগে খেলতেন শখের ক্রিকেট। পড়ালেখা শেষ করার পর ক্রিকেটকে নেন ‘ফুলটাইম জব’ হিসেবে। শুরু হয় সিকান্দার রাজা-র জীবনের নতুন গল্প। যে গল্পে তিনি পাকিস্তানি থেকে হয়ে যান জিম্বাবুয়ান। শিয়ালকোটে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার এখন জিম্বাবুয়ের অন্যতম ভরসা। সম্প্রতি টোয়েন্টি লাইভ নিউজপেপারের প্রতিনিধি সাইফ হাসনাত-কে একান্ত এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

sikandar raza interview 24 live newspaper

আপনি কিভাবে পাকিস্তানি থেকে জিম্বাবুয়ান ক্রিকেটার হয়ে গেলেন, এই সাক্ষাৎকারে আপনার মুখ থেকে সেই গল্প শুনবো। তার আগে বলুন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কী অভিজ্ঞতা দিলো আপনাকে?

এবারই প্রথম বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতা হলো। বিপিএলের অভিজ্ঞতা আমার কাছে এক কথায় দুর্দান্ত। আর আমাদের দলটা একটা পরিবারের মতো। দলের ম্যানেজমেন্টও খুব ভালো। আমি চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে প্রতিটি দিন খুব উপভোগ করছি। এখনো আমাদের দুটি খেলা বাকি আছে। আশা করি এখানে ভালো করতে পারবো, নিজের সেরাটা দিতে পারবো। এরপর আশা করি পরের সেশনে আবার বিপিএল খেলা হতে পারে।

মোটের উপর চিটাগং ভাইকিংস খারাপ দল ছিলো না। আপনি ছিলেন, ছিলেন মিসবাহ উল হক- লুক রঙ্কির মতো ক্রিকেটার। এ ছাড়া তাসকিন আহমেদ, এনামুল হক বিজয়ের মতো পরীক্ষিত পারফর্মারও ছিলেন। তারপরও এমন অবস্থা কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

দেখুন আমরা কিন্তু বেশির ভাগ ম্যাচে একেবারে কাছে গিয়ে হেরেছি। কোনো ম্যাচে একেবারে শেষ ওভারে গিয়ে হারতে হয়েছে। জেতার জন্য চূড়ান্ত কাজটাই শুধু করতে পারিনি। ক্রিকেটে আসলে এমন হয়। ক্রিকেট খুবই অনিশ্চিত একটা খেলা। তিনটা ম্যাচে আমরা শেষ ওভারে গিয়ে হেরেছি। সেটা না হলে কিন্তু আমাদের পয়েন্ট থাকতো ১১ এবং সব কিছু অন্য রকম হতো। আমরা কিন্তু দর্শকদেরকে দারুণ কিছু ম্যাচ উপহার দিয়েছি। নিজেদের পুরো শক্তি দিয়ে ভালো কিছু ম্যাচ খেলেছি। আর এ ধরনের টুর্নামেন্টে সবাই কিন্তু জিততেই আসে। আসলে আমরা যদি ভালো ক্রিকেট খেলি, তাহলে সেটা নিয়েই আমাদের খুশি থাকা উচিত।

এবার তো বিপিএলে অনেক বেশি বিদেশি ক্রিকেটার খেলছেন। আছেন বড় বড় তারকাও। বিদেশিদের এই ভিড় কি বিপিএলের মান বাড়াতে সাহায্য করবে?

আগেও দেখেছি, টিভিতে, বিপিএলে অনেক বড় বড় তারকা খেলতে আসেন। এবার আরো বেশি এসেছে। এতে করে অবশ্যই বিপিএলের মান বেড়ে গেছে। এর জন্য বিসিবি ধন্যবাদ পেতে পারে। কারণ তারা একাদশে পাঁচজন করে বিদেশি ক্রিকেটারকে সুযোগ করে দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় ক্রিকেটাররা একটা বিশ্ব মানের টুর্নামেন্টে খেলছে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় বিপিএলের মান খুবই ভালো এবং বিসিবির পলিসি যদি একই থাকে, তাহলে বিপিএল ক্রিকেটকে এভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাবে।

স্থানীয় ক্রিকেটাররা শুরুতে ভালো কিছু করতে না পারলেও পরে তারাই জেতাচ্ছেন দলকে। স্থানীয়দের কেমন দেখলেন?

প্রত্যেকটা দলেই খেয়াল করেছি একাধিক স্থানীয় ক্রিকেটার আছে, যারা খুব ভালো করছে। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ; এই তিনজনকে দেখছি বছরের পর বছর দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া মাশরাফি ভাই আছেন। যারা এক কথায় অবিশ্বাস্য পারফর্মার। বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য যা দারুণ একটা ব্যাপার। স্থানীয় তরুণদের জন্য এরা সবাই ক্রিকেটকে আরো ভালো করে বোঝার দারুণ উৎস। তরুণদের মধ্যেও অনেকে ভালো করছে। খুলনা টাইটান্সে আছে আবু জায়েদ রাহি, ঢাকায় আছে আবু হায়দার রনি। এই দুই পেসারকে দেখছি দুর্দান্ত খেলছেন। এ ছাড়া জাকির হাসান (রাজশাহী কিংস) নামে একজনকে দেখছি। এ ছাড়া তাসকিনের নামটাও বলতে চাই। যার শুরুটা খুব ভালো ছিলো না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে ভালো করেছে। নেটে সে প্রতিদিন ১৫ ওভার করে বোলিং করে। খুবই পরিশ্রমী ছেলে সে। সে সব সময়ই শিখতে আগ্রহী। চিটাগংয়ের ফ্লাট উইকেটে সে যেভাবে বোলিং করেছে, তা দেখেই বোঝা যায় সে কতোটা ভালো বোলার। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় স্থানীয় খেলোয়াড়রা খুবই ভালো পারফর্ম করছে।

বিপিএল নিয়ে আর না! এবার আপনার পাকিস্তানি থেকে জিম্বাবুয়ান, পাইলট থেকে সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং তারপর ক্রিকেটার গল্পটা শুনি!

আবার বাবা জিম্বাবুয়েতে থাকতেন। সেখানে তার নানা ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো। এক পর্যায়ে আমারদের পরিবারকে সেখানেই থিতু হতে হয়। আমি আমার কলেজ পাকিস্তানেই শেষ করেছি। এরপর স্কটল্যান্ডে সফটওয়্যার প্রকৌশলে পড়াশোনা শেষ করি। এরপর পুরোদমে ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত হই। ক্রিকেট খেলা নিয়ে পরিবার থেকে পূর্ণ সমর্থন ছিলো।

এটুকুই! লেখাপড়া শেষ করার পর পুরো সময় ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে সাহস ও আত্মবিশ্বাসের দরকার হয়, সেই সাহস ও আত্মবিশ্বাস জুগাতে আপনাকে অনুপ্রেরণা দিলো কে?

ক্রিকেট খেলাটাই আসলে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমি সব সময়ই ক্রিকেট খেলতে চাইতাম, খেলাটাকে ভালোবাসতাম। এর বাইরে বিশেষ কোনো অনুপ্রেরণা নেই। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো যখনই আমি কোনো স্বপ্নের পিছনে ছুটেছি, আমার পরিবার থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। আমি ফাইটার পাইলট হতে চেয়েছিলাম। তখনও আমার পরিবার থেকে সমর্থন ছিলো। কিন্তু মেডিকেল টেস্টে আমি ব্যর্থ হই। এরপর সফটওয়্যার প্রকৌশল পড়ি। তারপর ক্রিকেট। তিন তিনটা জায়গায়ই আমার পরিবার থেকে পূর্ণ সমর্থন ছিলো। মূলত পরিবারের সমর্থনের কারণেই আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি।

যদি কোনো ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে বলি, যার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আজ এখানে এসেছেন; কার নাম বলবেন?

আসলে ক্রিকেটই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এর বাইরে আমার কোনো অনুপ্রেরণা নেই। আমার দাদা আমাকে শিখিয়েছেন একজন ভালো মানুষ হতে। মূলত তার এই শিক্ষাই আমার পরিবার ও আমাকে এখানে এনেছে, যেখানে আমরা এখন আছি। একই সাথে ক্রিকেটও আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

এবার জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট প্রসঙ্গে যাওয়া যাক। ব্রেন্ডন টেলর ও কাইল জারভিস ফিরেছেন। তাদের ফেরার পর জিম্বাবুয়ে নিশ্চয় নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখছে।

ব্রেন্ডন টেলর এবং কাইল জারভিসের দলে ফেরাটা দারুণ ব্যাপার। তাদের অন্তর্ভুক্তি আমাদের স্কোয়াডে অনেক মান ও অভিজ্ঞতা যোগ করেছে।

অনেক সময় নিয়ে ফেললাম! তা ক্যারিয়ার শেষে ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? কী পেতে চান ক্রিকেট থেকে?

জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে! আসলে সেটা তো অনেক দূরের ব্যাপার। এখনো তাই শেষ নিয়ে কিছু ভাবিনি। আমি একটা একটা দিন নিয়ে চিন্তা করি। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, তিনি আমাকে অনেক সুযোগ দিচ্ছেন। যা এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে খুব সহায়তা করছে। ক্যারিয়ার শেষে কোথায় থাকবো, সেটা আসলে ক্যারিয়ার শেষেই বোঝা যাবে!

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.