অবশেষে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করলেন পোপ

মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের চাপের মুখে সেখানে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করলেও বাংলাদেশ সফরে সেই শব্দটি উচ্চারণ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাদের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিষয়ে ব্যাথিত হন বিশ্বব্যাপী ১২০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানের প্রধান ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।

আজ শুক্রবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রথমবারের মতো ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন পোপ। ১৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পোপ ফ্রান্সিস বলেন, 'রোহিঙ্গাদের মাঝেও ঈশ্বরের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। যারা আপনাদের ওপর অত্যাচার করেছেন, কষ্ট দিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। আপনারা বড় মনের পরিচয় দিয়ে আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন।'

বাংলাদেশ সফরের আগে মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। পোপের এই ঐতিহাসিক সফরের প্রাক্কালে মিয়ানমারের সরকারি দপ্তর অবশ্য রোহিঙ্গা শব্দটি প্রত্যাখ্যান করেছে। পোপকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শটি দিয়েছেন মিয়ানমারের কার্ডিনাল আর্চবিশপ চার্লস মোং বো। এর আগে পোপকে একই ধরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানও। তাই সংঘাত এড়াতে মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে আনেননি পোপ।

মিয়ানমার মূলত রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে তাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করতে চায়। নেপিদোতে দেয়া ভাষণে পোপ বলেছেন, 'ধর্মীয় ভিন্নতা কখনো বিভেদ ও অবিশ্বাসের উৎস হতে পারে না। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন একতা, ক্ষমাশীলতা, সহনশীলতা। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিজ্ঞ মনোভাবের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপিদোতে প্রধান ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি বর্জন করে কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং অং সান সু চি’র অস্বস্তি ঠেকিয়েছেন পোপ। রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনতাকে উত্তেজিত করতে চাননি পোপ ফ্রান্সিস। বিশ্লেষকরা বলছেন, পোপ রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করলে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন বাড়ার আশঙ্কা ছিল। পোপ কৌশলে রোহিঙ্গা শব্দটি এড়িয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।