আদৌ কি কোনোদিন পূরণ হবে মেয়র আনিসুলের স্বপ্ন?

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের চলে যাওয়ার সাথে সাথে থমকে গেলো রাজধানী ঢাকার অনেক স্বপ্ন। নগরবাসীর স্বপ্ন। তার মৃত্যুর পর এই স্বপ্ন আদৌ কোনোদিন আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে এখনই নানান শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আনিসুল হক মেয়র হওয়ার পর থেকেই তার নাগরিকবান্ধব নানা উদ্যোগে একটি পরিচ্ছন্ন রাজধানীর স্বপ্ন দেখছিলেন নগরবাসীরা। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নেন তিনি।

দায়িত্ব নেয়ার পর ওই বছরেরই ২৯ নভেম্বর রাজধানীর অন্যতম তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে ফার্মগেটের রেলগেট পর্যন্ত সড়ক থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাকে পরিবহন শ্রমিকদের হাতে অবরুদ্ধও হতে হয়। তারপরও ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে সফল হন তিনি। বর্তমানে ওই সড়কের আইল্যান্ডে দৃষ্টিনন্দন গাছ লাগিয়ে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাবাজার সরিয়ে মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন মেয়র। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বেশ কয়েকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কাজের মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঠিকাদারদের নগরভবনে ঘোরাঘুরি নিষিদ্ধ করেন আনিসুল হক। তার সময়ে পেশাদার ঠিকাদার ছাড়া অন্যদের কাজ দেওয়া হতো না বললেই চলে।

শুধুমাত্র নারীদের কেনাকাটার জন্য গত ১৮ মে মহাখালীতে একটি উইমেনস হলিডে মার্কেট উদ্বোধন করেন আনিসুল হক। এছাড়া প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা করে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

রাজধানী পরিচ্ছন্ন করার কাজ ঠিকভাবে এগোচ্ছে কি না তা দেখার জন্য প্রায়ই গভীর রাতে বা ভোরে বের হতেন জনপ্রিয় এই মেয়র। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তাদের কাজে মনোযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

এছাড়া রাজধানীর প্রতিটি সড়কে এলইডি বাতি সংযোজন, চার হাজার আধুনিক বাস সার্ভিস চালু, ২২টি ইউলুপ নির্মাণ, ২০ হাজার বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে পরিকল্পিত বিলবোর্ড স্থাপন, গ্রিন ঢাকা পরিকল্পনায় ইকো-বাস সার্ভিস চালু, ঢাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাছ লাগানো, সড়কে সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো রিকশামুক্ত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা –এমন হাজারো কাজের পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিলেন রাজধানীর সবচেয়ে যোগ্য মেয়র আনিসুল হক।

কিন্তু তার অসুস্থতার সময়েই এইসব কাজ থমকে যায়। আর এখন তিনি নেই –এমন পরিস্থিতিতে এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কতোটুকু আলোর মুখ দেখবে বা আদৌ দেখবে কি না, তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়েই রইলো।

উল্লেখ্য, শারীরিক চেকআপের জন্য গত ২৯ তারিখ লন্ডনে যান দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই মেয়র আনিসুল হক। ১৩ আগস্ট তিনি সেখানে সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করেন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে তিনি লন্ডনে ইন্তেকাল করেন।

১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার কবিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। শিক্ষাজীবনে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন। গত শতকের ৮০ ও ৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেন।

২০০৫ সালে তিনি বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন।

২০১৫ সালের এপ্রিলে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। মেয়রের দায়িত্বপালনকালে বিভিন্ন জনহিতকর পদক্ষেপের জন্য বেশ আলোচিত হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে যোগ্য মেয়র হিসেবেই তিনি পরিচিত।

বৈবাহিক জীবনে আনিসুল হকের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তার ভাই শফিউল হক বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।