'বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে দিচ্ছে বিপিএল '
- Details
- by সাইফ হাসনাত, চট্টগ্রাম থেকে
নেটে লম্বা একটা সেশন ব্যাটিং করার পর ব্যাট-প্যাড গুছিয়ে রাখছিলেন লুক রাইট। ইংলিশ ক্রিকেটের এক সময়ের পোস্টারবয় এখন বাংলাদেশে। ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে। তার দল রাজশাহী কিংসের অবস্থা অবশ্য খুব ভালো নয়। তারপরও সাক্ষাৎকারের আবদার শুনে সরাসরি হাসিমুখে হা বলে দিলেন। একটু দূরে তখন সাক্ষাৎকার শেষের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তার বড় ভাই অ্যাশলি রাইট। যাকে ক্রিকেট খেলতে দেখেই ব্যাট-বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন লুক। ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, এখনও তেমন অ্যাশলি আছেন ছোট ভাইয়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে। পালন করছেন ছোট ভাইয়ের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বও। লুক রাইটের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক- সাইফ হাসনাত।
লুক, বাংলাদেশে আপনার সময় কেমন কাটছে? বিপিএল কতোটা উপভোগ করছেন?
খুব ভালো সময় যাচ্ছে। বিপিএলও উপভোগ করছি। কিন্তু দল যেহেতু খুব ভালো করতে পারছে না, বিপিএল উপভোগ করা তাই একটু কঠিন। যদি আরো কয়েকটা ম্যাচ জিততে পারতাম, সব কিছু আরো দুর্দান্ত হতো। আমার মনে হয় বিপিএলে যে দলগুলো খেলছে, তারা প্রত্যেকেই খুব ভালো দল। ফলে প্রত্যেকেই প্রত্যেককে হারাচ্ছে।
আপনি তো বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে বেড়ান। তো বিগব্যাশ-পিএসএল বা আইপিএলের সঙ্গে বিপিএলের পার্থক্য কেমন দেখেন?
তুলনা করা আসলে কঠিন। কারণ কন্ডিশনসহ অন্যান্য ব্যাপারগুলো মহাদেশভেদে ভিন্ন। এখানে, বাংলাদেশে অনেক তরুণ প্রতিভা উঠে আসছে। ২০১২ সালে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে খেলতে এসে যেমন দেখেছিলাম, আর এখন যেমন দেখছি; তাতে আমার এটাই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের স্থানীয়রা খুব উন্নতি করছে। বিশেষ করে এই বিপিএলে আমি জাকিরকে (জাকির হাসান, রাজশাহী কিংস) দেখলাম। খুব ভালো প্রতিভা। ওর মতো অনেকেই উঠে আসছে। যদিও বিপিএলে ফিল্ডিং ততোটা ভালো নয়। প্রতিটি ম্যাচেই চার-পাঁচটা ক্যাচ পড়তে দেখা যাচ্ছে। আমার মনে হয় এখানে আরো উন্নতি করা দরকার।
সব মিলিয়ে বিপিএলের মান নিয়ে কী বলবেন? বিগব্যাশ বা অন্যান্য লিগের তুলনা করলে বিপিএল মানের দিক থেকে কোথায় আছে? বিশ্বমান কি ছুঁতে পারছে?
বিপিএলের মান খুব ভালো। দিনে দিনে আরো ভালো হচ্ছে। তবে অস্ট্রেলিয়া বা অন্য দেশের ভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে এর তুলনা করা কঠিন। প্রতিবার এখানে এসে যেমন দেখছি, তাতে মনে হয় ধীরে ধীরে বিপিএলের মান বেশ উন্নত হচ্ছে। বিপিএলের কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বদলে যাচ্ছে। উঠে আসছে অনেক তরুণ ক্রিকেটার। যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে দারুণ কিছু করবে। জাকিরের কথা তো বললাম। অন্য দলের তরুণদের মধ্যে আফিফকে দেখছি। সে খুব ভালো খেলছে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও নাকি খুব ভালো পারফর্মার ছিলো আফিফ। আশা করি সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করবে।
এ ছাড়া আর কোনো স্থানীয় তরুণকে খেয়াল করেছেন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারে?
আসলে বেশ কয়েকটি দলেই ভালো ভালো তরুণ ক্রিকেটার আছে। কিন্তু আমি জাকির ও আফিফকে তুলনামূলক কাছ থেকে দেখেছি। অন্যদের সেভাবে দেখা হয়নি। জাকিরকে প্রথম দিন থেকেই দেখেছি যে, সে খুব সিরিয়াস। সে কিপিংও করে, আমি বিশ্বাস করি তার খুব ভালো ভবিষ্যত সামনে পড়ে আছে। আশা করি কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলবে।
জাকিরকে আসলেই কি জাতীয় দলে আশা করছেন?
আমি এটা বিশ্বাস করি। কারণ তার মধ্যে খুবই সিরিয়াস প্রতিভা আছে। সে সম্ভাবনাময় তরুণ। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সে কিপিংও করে, আমি অবশ্য তাকে কিপিং করতে দেখিনি। সব মিলিয়ে আমি মনে করি তাকে বাংলাদেশ দলে দেখতে পারবো।
বিপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি লিগের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আইসিসিও খুব জোর দিচ্ছে এই ফরম্যাটে। আপনি কি মনে করেন ক্রিকেটের বিশ্বায়নের যে চেষ্টা, সেটা টি-টোয়েন্টি দিয়েই সফল হবে?
আপনি যেখানেই যাবেন, টি-টোয়েন্টিতে দেখবেন যে খুব দর্শক হচ্ছে এবং দর্শকদের এই উপস্থিতি বেড়েই চলছে। ক্রিকেটের এই ফরম্যাট নিয়ে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। টি-টোয়েন্টি মানুষের মধ্যে আগ্রহের জন্ম দিচ্ছে অনেক। এখানে তারা মাথার সমান উঁচু বাউন্সার দেখবে, রিভার্স সুইপ দেখবে; যা তাদের আগ্রহী করে তুলছে। এ কারণে পুরো পরিবারসহ ক্রিকেট দেখতে চলে আসছে অনেকে। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি দারুণ জনপ্রিয় এবং এটা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার।
আপনার নিজের দলের কথায় ফিরি। দেশীয় এবং বিদেশি মিলিয়ে রাজশাহী যথেষ্ট শক্তিশালী দল। তারপরও তাদের অবস্থা এতো খারাপ হয়ে গেলো কী করে?
আমার মনে হয় আমাদের বোলিংটা ভালো হচ্ছে না। খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে (২৭ নভেম্বর) আমাদের সামনে অনেক বেশি রান চেজ করার চ্যালেঞ্জ ছিলো। গত মৌসুমে ভালো খেললেও এবার আমাদের ঠিকভাবে হচ্ছে না। ভাগ্য এবং আত্মবিশ্বাসেরও কিছুটা অভাব আছে হয়তো।
দলের এমন অবস্থার কারণে নিশ্চয় মোটের উপর বিপিএলটা আপনার জন্য তেমন সুখকর নয়!
আপনি যখন হেরে যাওয়া দলে থাকবেন, সেটা অবশ্যই ভালো কোনো ব্যাপার নয়! জয় পেলে কোচ খুশি হয়, খেলোয়াড় এবং দলের মালিকও খুশি হয়। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। কোনো না কোনো পর্যায়ে কাউকে হারতেই হয়। আমরা অবশ্য সব সময়ই কঠোর অনুশীলন করি, জেতার জন্য চেষ্টা করি। পরিবার, ভাই-বন্ধুদের খুশি রাখতে সচেষ্ট থাকি। আশা করি পরের ম্যাচগুলো আমরা জিততে পারবো।
রাজশাহীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড্যারেন স্যামি, যিনি দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র অধিনায়ক। নেতা স্যামিকে কেমন দেখছেন? তার অধিনায়কত্বের আকর্ষণীয় ব্যাপার কী?
সে দারুণ লোক। অধিনায়ক হিসেবে সে দৃঢ়তাপূর্ণ। খেলোয়াড় হিসেবেও সে দারুণ পারফর্মার। কিন্তু বোলাররা যদি ভালো না করে, তবে একজন ব্যাটসম্যানের করার কিছু থাকে না। সবারই আসলে ভালো কিছু করার প্রয়োজন থাকে। ড্যারেন ব্যক্তিগতভাবে খু্বই ইতিবাচক এবং দলকে সব সময় অনুপ্রাণিত রাখতে চেষ্টা করে।
আপনার ক্যারিয়ার শুরুর দিকের আলোচনায় যাওয়া যাক। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে আপনার আবির্ভাব। বলা হতো ইংল্যান্ড ক্রিকেটে আপনি ফ্লিনটফের উত্তরসূরী। নিজের শুরু এবং ক্যারিয়ারে ফ্লিনটফের ছায়া; এ সব বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আসলে আমি এভাবে চিন্তা করিনি। ফ্লিনটফ ছিলেন ফ্লিনটফ। এখন যেমন বেন স্টোকস বেন স্টোকসই। ফ্লিনটফ ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করতেন। আর আমি সর্বোচ্চ ৮০ মাইল গতিতে করেছি। সুতরাং দুজনই ভিন্ন রকমের। ইংল্যান্ডে আসলে এ ধরনের কথা কেউ বলেনি, এ সব কথা বলা হয় অন্যান্য জায়গায়।
একজন লুক রাইট হয়ে উঠার পিছনে আপনার অনুপ্রেরণার উৎস কী ছিলো? গ্রান্টহ্যামের মতো জায়গায় জন্ম নেয়া তরুণরা তো কতো স্বপ্নই দেখে। আপনি কেনো ক্রিকেটার হয়ে উঠলেন? কোনো ক্রিকেটাররার আপনার ক্রিকেটার হয়ে উঠাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
জ্যাক ক্যালিস, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, পোলক; আমার ছোটবেলায় এদের প্রভাব আছে অনেক। এ ছাড়া আমার ভাই অ্যাশলি (রাইট) আমার অনেক বড় অনুপ্রেরণা। সে এখন আমার ব্যাটিং কোচ। সেই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রভাবক। ছোটবেলায় তাকে ক্রিকেট খেলতে দেখেই আমি প্রথম এই খেলার প্রতি টান অনুভব করি।
ইংল্যান্ডের হয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন। এর বাইরেও পেশাদার ক্রিকেটে আপনার সময়টা বেশ লম্বা। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি কী?
ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত- সেরা প্রাপ্তি। এ ছাড়া মেলবোর্নে ৯০ হাজারের বেশি মানুষের সামনে ক্রিকেট খেলাও ছিলো দারুণ ব্যাপার। তবে বিশ্বকাপটাই বেশি স্মরণীয়।
আর যদি সবচেয়ে আফসোসের বিষয় জানতে চাই; কী বলবেন!
নাহ, কোনো আফসোস নেই। কখনো কখনো হারলে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু ইংল্যান্ডের হয়ে একশ ম্যাচ খেলা, বিশ্বকাপ জেতা; কোনো আফসোস নেই। ইংল্যান্ডের হয়ে অনেক সিরিজ জিতেছি, ট্রফি জিতেছি; আমি আসলে অনেক সুখী মানুষ।
বর্তমানে ফেরা যাক। সুখী মানুষ লুক রাইট কি অ্যাশেজ ফলো করছেন? যেখানে প্রথম ম্যাচটা বড় ব্যবধানে হেরেছে তারই দেশ!
অ্যাশেজ ফলো করছি। অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ। একটা মাত্র টেস্ট শেষ হয়েছে। আমার মনে হয় এটা আমাদের দলের জন্য খুব কঠিন সিরিজ হবে। পিংক বলে ইংল্যান্ডের জন্য ভালো সুযোগ তৈরি হতে পারে। সব কিছুই আসলে নির্ভর করছে রান বেশি করা না করার পর। ভালো কিছুর জন্য আমাদের স্কোরবোর্ডে বড় রান যোগ করতে হবে।
ইংল্যান্ড দলে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে কী ভাবেন? এ বিষয়ে পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়।
আমি হয়তো আবার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলবো। কিন্তু তার আগে এখন লক্ষ্য হলো বিগব্যাশ। বিপিএলের পর সেখানে যাবো। আবার মেলবোর্ন স্টার্সের হয়ে খেলবো। তারপর খেলবো পিএসএল।
এই যে সারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছেন, পরিবার থেকে দূরে থাকছেন; স্ত্রী-সন্তান রাগ করে বসে থাকে না? কিভাবে সামলান তাদের?
(হাসি..) অস্ট্রেলিয়াতে পুরো পরিবার আসবে। সেখানে আমার স্ত্রীর সাথে দেখা হবে। সুতরাং রাগটাগ থাকলে সেখানে সব ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা!
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.