বিডিআর বিদ্রোহে মৃত্যুদণ্ড ১৩৯ জনের, বেকসুর খালাস ৪৫

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত। এজাড়া যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে, আর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে আরো ১৯৬ জনকে। এবং বেকসুর খালাস পেয়েছেন ৪৫ জন। খালাসপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে নিম্ন আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার জন আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে রয়েছেন ১২ জন। এছাড়া বিচারিক আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জনের মধ্য থেকে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

২০১৩ সালে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল, ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত থেকে খালাসপ্রাপ্ত একজন ইতোমধ্যেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন।

হাইকোর্টের এ রায়ে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে, ১২ জন খালাস পেয়েছেন এবং দুই জনের কারাগারেই মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন হলেন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, মারা যান ২০১৫ সালের ৩ মে। আর একজন হলেন সিপাহি শফিকুল ইসলাম, মারা যান ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্য থেকে যে ১২ জন খালাস পেয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী, ডিএডি মো. সিরাজুল ইসলাম, সিপাহি শাহিদুল ইসলাম, সিপাহি সাইদুল ইসলাম, সিপাহি আতিকুর রহমান, নায়েব সুবেদার আলা উদ্দিন, হাবিলদার কামাল উদ্দিন, আমাদুল হক, রাশেদ আলী খোকা, মো. আলম, মানিক চন্দ্র, আলমগীর হোসেন।

এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ২৫৬ জনের মধ্য থেকে ২ জনকে ১৩ বছর, ১৮২ জনকে ১০ বছর, আটজনকে ৭ বছর এবং চারজনকে ৩ বছর করে সাজা দেয়া হয়েছে। আপিল করেননি ২৮ জন, মারা গেছেন ৩ জন। আর বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে ২৯ জনকে।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলে নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং অপর ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছে।

সোমবার বিকালে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের বিশেষ এই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। আজ হাইকোর্টের রায়ের মধ্যে দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দু’টি ধাপ শেষ হলো।

আসামি সংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। এই মামলায় মোট ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে সাজা দেয়া হয় মোট ৫৬৮ জনকে। আর খালাসপ্রাপ্তদের সংখ্যা ছিলো ২৭৮ জন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। 

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাসপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এই আপিলের ওপর ভিত্তি করে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয় এবং গত ১৩ এপ্রিল ৩৭০তম দিনে শেষ হয়। সেদিন শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এরপর গতকাল রোববার ও আজ সোমবার আদালতের পর্যবেক্ষণ ও ঐতিহাসিক এই রায় প্রকাশ করা হয়।