পুতিন এরদোয়ান বৈঠকে যা হলো…

তুরস্ক ও রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে রাজি হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট।

শূচি শহরের ব্ল্যাক সী কোস্টালে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্ক আরও গভীরতর করতে রাজি হয়েছি।'

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন বিশেষ স্তরে রয়েছে উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেন, এটা (দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক) অবশ্যই সন্তোষজনক নয়। দুই দেশের জনগণেরই উচিত সবক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও জোরদার করা।’

এবছর তৃতীয়বারের মত রাশিয়া সফর করছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। আর পুতিনের সঙ্গে এবছর তুর্কি প্রেসিডেন্টের এটি ষষ্ঠ বৈঠক। 

এরদোয়ান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার তুরস্কের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরকে ছাড় দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন এরদোয়ান। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে যৌথ প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট বলেন, তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক প্রাক-সংকট মাত্রায় রয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি হচ্ছে। এটি তারই ইঙ্গিত দেয়। এ বছরের প্রথম ৯মাসে ৩৬ ভাগ ট্রেড ভলিয়াম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের বাণিজ্য ঘাটতি এবছরের শেষ নাগাদ পুষিয়ে যাবে।

পুতিন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে দুই দেশের মধ্যে যেসব জায়গায় সমস্যা রয়েছে সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষভাবে সিরিয়া সংকট নিয়ে আমাদের মধ্যে বিশেষ আলোচনা হয়েছে।

তুরস্ক ও রাশিয়া সিরিয়া সমস্যা সমাধানে আবারও আলোচনায় বসবে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রমে সিরিয়া থেকে ‘সফলভাবে’ সহিংসতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ডিসেম্বরে তুরস্ক থেকে ৫০ হাজার টন টমেটো আমদানি করবে রাশিয়া। রাশিয়া ও তুরস্ক উভয় দেশ টমেটো বাণিজ্য পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়।

২০১৫ সালের সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার জেরে তুরস্কের খাদ্য আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো রাশিয়া। বর্তমানে দুই দেশের কূটনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে।

পরে উভয় দেশ নিজেদের স্বার্থে কূটনৈতিক সমাধান বের করে নেয়। ধাপে ধাপে তুরস্কের নির্মাণ, পর্যটন এবং হোটেল ব্যবসা খাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্বের প্রভাবশালী এ দেশটি।

২০১৬ সালের ২৮ জুন বিমান ভূপাতিতের ঘটনার জন্য এরদোয়ান নিহত পাইলটের পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানান। এতে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসে। এর পরের মাসেই ১৫ জুলাই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এরদোয়ান সরকারকে সক্রিয় সমর্থন দেয় রাশিয়া। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।