সৌদিতে লেবাননের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎকার
- Details
- by তাইয়্যিপ আহসান রাফান
সৌদি আরবে গিয়ে নিজের প্রাণনাশের শঙ্কায় পদত্যাগী লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সা’দ আল হারিরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্থানীয় সময় রোববার তার সাক্ষাৎকার প্রচার করে সৌদির ফিউচার টিভি চ্যানেল। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা।
ফিউচার টিভিকে ওই সাক্ষাৎকারে হারিরি বলেন, ‘আমি মুক্তই আছি, আর কয়েকদিনের মধ্যেই লেবাননে ফিরছি। দেশে ফিরেই সাংবিধানিক রীতিতে পদত্যাগ করব। আমি আমার জীবন নিয়ে পরোয়া করি না। কিন্তু লেবাননের মানুষ নিরাপদে থাকুক সেটাই চাই। ’ গত সপ্তাহে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর ওই চ্যানেলকে দেয়া এটিই হারিরির প্রথম সাক্ষাৎকার।
তিনি বলেন, ‘আমি হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধী নই। তবে লেবানন ধ্বংস হয়ে যাক সেটা আমি চাই না। আরব দেশগুলোতে ইরানের অনধিকার চর্চা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর ইরানি প্রচেষ্টা আমরা প্রত্যাখ্যান করি। সিরিয়ান সরকারের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক করতে যাব না, কারণ তারা চায় না। লেবাননকে আঞ্চলিক সংকট থেকে দূরে রাখতে এসব বিষয় পরিষ্কার করতে হবে।’
সাদ হারিরি বলেন, ‘লেবানন একটি ছোট দেশ। তার নিরপেক্ষ থাকা উচিত। কোনো অক্ষের পক্ষে সরাসরি তার যাওয়া উচিত হবে না। নিকটবর্তী হওয়ার কারণে সৌদি আরব সব সময় লেবাননকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। যদি অন্য অক্ষে (ইরান) যাই তবে আমাদের (লেবাননের নাগরিক) উপসাগরীয় অঞ্চলের ৪ লাখ মানুষের কী হবে?
এক প্রশ্নের জবাবে হারিরি বলেন, ‘আমি মনে করি সৌদি আরবের মত দুর্নীতি বিরোধী অভিযান লেবাননেও পরিচালনা করা হবে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমার বিষয়ে সৌদি আরবের প্রচারণার বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।’
রিয়াদ সফরে গিয়ে হঠাৎ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিলে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। তবে লেবাননের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের দাবি, হারিরিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সৌদি সরকার আটক করে রেখেছে। জোর করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে।
সা’দ আল-হারিরি পদত্যাগ ঘোষণার পরপরই সৌদি আরব, ইরান ও লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সৌদি আরব, কুয়েত ও বাহরাইন তাদের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
সা'দ হারিরি লেবাননের একজন সুন্নি মতালম্বী রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে এক বোমা হামলায় হারিরির পিতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাফিক নিহত হন।
কেড়ে নেয়া হয় হারিরির মোবাইলফোন: রয়টার্স জানায়, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরির বিমান (৩ নভেম্বর) যখন সৌদি আরবে অবতরণ করে তখনই তিনি বিস্মিত হন। একজন প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফর হলেও তাকে অভ্যর্থনা জানাতে কোনো সৌদি প্রিন্স বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। অবাক করে দিয়ে এরপর তার মোবাইলফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের তোয়াক্কা না করে তার সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা হয়। পরের দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। সেই বিবৃতি প্রচার করে সৌদির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল।
সৌদি-লেবানন উত্তেজনা: আলজাজিরা জানায়, হারিরির পদত্যাগে সুন্নি রাজতন্ত্রের সঙ্গে শিয়া ইরানের উত্তেজনা বেড়ে তুঙ্গে উঠেছে। লেবাননকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। দেশটির প্রধান রাজনৈতিক শক্তি ও সরকারের শরিক হিজবুল্লাহকে কোণঠাসা রাখতে সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে নানা চেষ্টা চালাচ্ছে।
যে কারণে হারিরির পদত্যাগ: হারিরির ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডলইস্ট জানায়, হারিরি হিজবুল্লাহকে মোকাবিলা করতে রাজি হননি বলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। সৌদি আরব হারিরির ভাই বাহাকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বানাতে চায়। বাহা এখন সৌদিতে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ হারিরি পরিবারের সদস্যদের রিয়াদে গিয়ে বাহার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বলেছে। তবে তারা এতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
হারিরির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, গত ২ নভেম্বর হারিরিকে ফোন করে সৌদি বাদশার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আহ্বান জানানো হয়। লেবানন ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি কর্মকর্তাদের বলে যান যে, সোমবার (৬ নভেম্বর) আবার আলোচনায় বসবেন।
রিয়াদে হারিরির বিমান অবতরণের পরপরই তিনি বুঝতে পারেন যে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তাকে স্বাগত জানাতে কেউ আসেনি।
হারিরির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ৪ নভেম্বর তাকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর তাকে টেলিভিশনের সামনে তার পদত্যাগের বিবৃতি পাঠ করতে বলা হয়।
কে এই হারিরি: হারিরি সৌদি ও লেবাননের দ্বৈত নাগরিক। সাদ হারিরির পূর্ণ নাম সাদ আল দ্বীন রফিক আল হারিরি। ১৯৭০ সালের ১৮ এপ্রিল সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্মগ্রহণ করা হারিরির বাড়ি ও ধনসম্পদ রয়েছে। তিনি ২০০৯ থেকে জুন ২০১১ পর্যন্ত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৬ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন লেবাননে গুপ্তহত্যার শিকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির দ্বিতীয় পুত্র সাদ হারিরি। ২০০৫ থেকে তিনি ফিউচার মুভমেন্ট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তার পিতা রফিক হারিরি ও মা নিদা বুসতানি ইরাকি বংশোদ্ভূত। সাদ ১৯৯২ সালে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় এর ম্যাক ডোনাগ স্কুল অব বিসনেস থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর হারিরি সৌদি আরবে ফিরে আসেন এবং বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি রিয়াদে ছিলেন। ২০১১ সালে সাদ হারিরি ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ নিয়ে বিশ্বের ৫৯৫তম ধনী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন।
তার মাতৃভাষা আরবি হলেও তিনি ইংরেজি ও ফ্রেন্স ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সিরীয় বংশোদ্ভূত লারা বসির আল আজমিকে বিয়ে করেন। তিন সন্তানের জনক হারিরির পরিবার ২০১১ থেকে নিরাপত্তার কারণে ফ্রান্সে বসবাস করছিল। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে তারা লেবাননে ফিরে আসেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.