সুধীর গৌতমের উপর হামলা নিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস

মিরপুরে ভারতের বিরুদ্ধে ২য় ওয়ানডে ম্যাচে জয় পাওয়ার দিন ভারতের অতি পরিচিত একজন সমর্থক সুধীর গৌতমের ওপর হামলার সংবাদে ভারত-বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমেগুলোতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারেও দুই দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে।

ইন্ডিয়ান সংবাদ মাধ্যম এবিপি নিউজের বরাতে জানা যায়, সুধীর গৌতম রোববার খেলা শেষে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় বাংলাদেশি সমর্থকেরা তাঁর উপর হামলা করে। সুধীর অভিযোগ করেন যে, তাঁকে পাথর ছুড়ে মারা হয়েছে এবং তিনি অটোরিক্সায় ওঠার পর তাতেও হামলা করা হয়েছে।

হামলা প্রসঙ্গে সুধীর গৌতমের নেয়া একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ ইউটিউবে আপলোড করেছে এবিপি নিউজ। মূলত এরপরই প্রথমে ভারত ও পরে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে সুধীর গৌতমের উপর হামলার ব্যাপারটি প্রকাশিত হয়।

সুধীরের উপর হামলা হয়েছে – এমন খবর প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এ ঘটনাকে তাদের জন্য অপমানজনক উল্লেখ করে ভারতীয়রা তাদের অভিযোগের তীর বাংলাদেশের দিকেই ছুঁড়ে দেন। অতি উৎসাহী কাউকে কাউকে বাংলাদেশের খেলোয়ারদের ব্যাপারেও হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর প্রচুর বাংলাদেশি তাদের স্ট্যাটাসে পুরো বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে ভারতের সাধারণ জনগণের কাছে ক্ষমা চান।

কিন্তু দিন গড়ালেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। সুধীর গৌতমের ওপর হামলার ব্যাপারটি পুরোপুরি মিথ্যা ও হামলার ব্যাপারে তাঁর সাক্ষাৎকারটিকেও বানানো বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, ইউটিউবে এবিপি নিউজের ঐ ভিডিওটি ২১ জুন আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওতে সুধীরকে দিনের বেলায় একজন প্রতিবেদকের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২য় ওয়ানডে ম্যাচটি ২১ জুন অনুষ্ঠিত হলেও ম্যাচ শেষ হয় একেবারে মধ্যরাতে। সুতরাং ভিডিওতে সুধীর কীভাবে ওই ২১ জুন দিনের বেলায়ই সাক্ষাৎকার দিলেন তা বোধগম্য নয়।

সাধারণত ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা হলে সেখানে স্থানীয় সময়ই প্রদর্শন করা হয়। ফলে ইউটিউবের সার্ভার ইউএসএ-তে অবস্থিত বলে ইউএস টাইম প্রদর্শন করা হচ্ছে, এমন কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

এদিকে ২১ জুন রাতে মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে খেলা শেষে সুধীর গৌতমের বের হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্রী সাংবাদিক আসিফ মাহমুদ অভি। তিনি সংবাদ মাধ্যকে বলেন, সুধীরের উপর শারীরিক আক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটে নি।

অভি বলেন, ‘স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে সুধীর সিএনজি ভাড়া করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশের সমর্থক তাঁকে ঘিরে ধরে টিপ্পনী কাটতে থাকেন। তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে তাঁকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে এবং তাঁকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেয়। তখন কিছু সমর্থক ‘ভুয়া-ভুয়া’ বলে চিৎকার করে।’ 

অভি বলেন, কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারের নিউজ অনুযায়ী সুধীরের উপর হামলা বা পাথর ছুঁড়ে মারার কোনো ঘটনা আমার চোখে পড়ে নি।

এছাড়া বাংলাদেশের পত্রিকা দৈনিক বণিক বার্তার সহ-সম্পাদক সালিম অর্ণবও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন। তিনিও সেখানে সুধীরের উপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটতে দেখেন নি বলে জানান।

সালিম অর্ণব তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘… সেখানে একটু দূরে স্টেডিয়ামের বাইরে তখনও আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। কিছু টোকাই পোলাপাইনকে দেখছি জাস্ট সুধীরকে ঘিরে ঘরে গোল হয়ে ডান্স দিয়ে ‘মওকা মওকা’ করেছে, তারপর ভুয়া ভুয়া ভুয়া শ্লোগানও চলেছে সমস্বরে। এরপর পুলিশদের পক্ষ থেকে কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন, টোকাইরা সরে গেছে। সুধীর একটা সিএনজিতে করে কেটে পড়েছে মাঠ থেকে। যাওয়ার সময় সে নিজেই খামচে খামচে নীল-গেরুয়ার মেকাপ তুলছিল মুখ থেকে।

অবাক হলাম আনন্দ বাজার ও তার তূল্য সংবাদকর্মীরা এতোবড় মিথ্যাবাদী হয়ে উঠলো কোন লজ্জায়। অন্তত যে রাজর্ষি দা এতো ভালো নিউজগুলো করেছেন তাঁর থেকে এমনি ছ্যাঁচড়ামি কখনোই আশা করিনি। আমাদের বিশ্বাস মিডিয়াতে এ অপপ্রচার দ্রুত বন্ধ হবে, আর প্রয়োজনে সুধীরকে ডেকে তার সাক্ষাতকার নেয়া হোক। আর সে মিথ্যা বললে স্টেডিয়ামের নিচে ঠিক ঐখানে ফুটেজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাও সেখানে ছিলো, তারা আগ্রহী হলে সুধীরের ভণ্ডামি এখানেই বন্ধ করা সম্ভব।’ 

তবে এবিপি নিউজের ভিডিওটি ছাড়াও ফেসবুকে সুধীর গৌতমের বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ হয়েছে, যেগুলোতে সুধীরকে একটি দোকানের ভেতর আত্মরক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। যদি সত্যিই সুধীরের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য সত্যিই লজ্জাজনক একটি ঘটনা।