পদত্যাগ নিয়ে এস কে সিনহার বক্তব্য...

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) জানিয়েছেন, সরকার তাকে স্বপদে ফেরাতে চায় না। ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে গেছে। এ অবস্থায় দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। তাই ‘বাস্তব অবস্থার’ পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগই যুক্তিযুক্ত।

সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা [ফাইল ছবি]

এস কে সিনহার ঘনিষ্ট এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম এ বক্তব্য প্রকাশ করে। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জানান, নানা আলোচনা-সমালোচনা আর প্রবল চাপের কারণে তিনি নিজেও এখন মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। তাই এ মুহূর্তে পদত্যাগের সিদ্ধান্তটাই সঠিক বলে তার কাছে মনে হচ্ছে।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জানান, সব সময় বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে বিচার কাজ করেছেন। তার সময়েই দেশের যুদ্ধাপরাধী দলের শীর্ষ নেতারা চূড়ান্ত দণ্ড পেয়েছেন। দণ্ড কার্যকরও হয়েছে তার আমলে। তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুশ্চিন্তা থাকাও স্বাভাবিক। তার নিজের কাছেও অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। তবে এসব চিন্তা ক্ষণিকের জন্য মাথায় এলেও পরক্ষণে তা ঝেড়ে ফেলেন।

ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রসঙ্গে এস কে সিনহা মনে করেন, এ নিয়ে সরকারের কাছে ভুল বার্তা গেছে। আসলে তিনি বিচারপতিদের মর্যাদা ও একটি সুন্দর রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। এজন্য ওই রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সেটা অন্যভাবে নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) দেশে ফেরার কথা ছিল ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। কিন্তু তিনি কানাডায় চলে যান। কানাডায় প্রধান বিচারপতি সিনহার কনিষ্ঠ কন্যা বসবাস করেন। গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

অস্ট্রেলিয়ায় তার বড় মেয়ের ওখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে আসেন। সেখানে চারদিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি। 

গত ২৭ আগস্ট থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি ছিল। এর মধ্যে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি বিদেশ সফরে ছিলেন। কানাডায় অসুস্থ কন্যাকে দেখার জন্য এবং জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান বিচারপতিদের এক সম্মেলনে অংশ নিতে ওই ছুটিতে যান তিনি।

২৩ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরলেও ২ অক্টোবর পর্যন্ত আদালতে অবকাশকালীন ছুটি চলছিল। ৩ অক্টোবর আদালত খুললে ফের এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সার আক্রান্ত তাই তিনি ছুটিতে গেছেন। তবে সরকারের এ বক্তব্য নিয়ে নানা মহলে প্রশ্নের উদ্বেগ হয়।

দেশ ত্যাগের পূর্বে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এসকে সিনহা

৩ অক্টোবর থেকে প্রধান বিচারপতির এক মাসের ছুটিতে যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ১০ অক্টোবর ওই ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে গত ১৩ অক্টোবর অষ্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগের আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি অসুস্থ্ নন। তার সম্পর্কে সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’

অন্যদিকে প্রধানবিচারপতির দেশত্যাগের পরপরই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ ১১টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এর আগে গত ১ আগস্ট বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে এ রায় দেন।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মূল রায়টি লেখেন প্রধান বিচারপতি। রায়ে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন ও সংসদ এবং সামরিক শাসন নিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন। রায় প্রকাশ হওয়ার পর সরকারের দায়িত্বশীল অনেকেই প্রধান বিচারপতির তীব্র সমালোচনা করেন।

একপর্যায়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তুলেন। সর্বশেষ চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই সরকার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।