সৌদিতে আটক ৫ শতাধিক, নির্যাতনে অসুস্থরা হাসপাতালে

সৌদি আরবে কথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশটির রাজপ্রাসাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র এ খবর জানিয়েছে। এদিকে অভিযানের সৌদির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান বন্দর বিন সুলতানকেও আটক করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে মিডলইস্ট আই জানিয়েছে , সৌদি কর্তৃপক্ষ যে সংখ্যা বলেছে আটক ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত প্রিন্স, কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ ৫০০ জনেরও বেশি আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক গোয়েন্দা প্রধান বন্দর বিন সুলতানও রয়েছেন।

বন্দর বিন সুলতান ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সৌদি আরবের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ১৯৮৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ২২ বছর আমেরিকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জনপ্রিয় গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই’ জানিয়েছে, আটক প্রিন্স, মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ওপর পুরনো পদ্ধতিতে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে এসব নির্যাতনের কারণে অনেক বন্দি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজকীয় ফরমানে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর ১১ রাজপুত্রকে আটক করা হয়। এছাড়াও বর্তমান ৪ মন্ত্রী ও সাবেক ১০ মন্ত্রীকে আটক করা হয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে, আটকের তালিকায় ৩৮ মন্ত্রী রয়েছেন বলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে।

আটকদের মধ্যে সৌদি আরবে ওয়ারেন বাফেট খ্যাত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালালসহ রাজ পরিবারের একাধিক সদস্যও রয়েছেন। সর্বশেষ আল-ওয়ালিদের  মেয়ে রাজকুমারী রিমকেও আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সৌদি সরকার রিমকে আটক করে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যিনি সংক্ষেপে ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত

চলতি বছরের শুরু থেকে বেশকিছু ক্ষেত্রে এককভাবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। যেগুলো গত কয়েক দশক ধরে চলে আসা রাজপরিবারের পুরনো ঐকমত্যভিত্তিক শাসনের বিপরীত। ঐকমত্যের শাসনের কয়েক দশকের পুরনো পদ্ধতি বাতিল করে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমানে রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি নিচ্ছেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও সৌদিবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেছেন।

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্রিসটোফার ডেভিডসন বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযান মোহাম্মদ বিন সালমানের সুলতানি ক্ষমতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার মতে, প্রভাবশালী রাজপুত্রই, মিডিয়া মোগল, শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের এই গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বিন সালমান আসলে দেখাতে চাচ্ছেন যে, কেউই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।’ সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা ও ব্রুকিংস ইন্টেলিজেন্স প্রজেক্টের পরিচালক ব্রুস রিডেল ডেভিডসনের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক গণগ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্রুস রিডেল ডেভিডসন বলেন, ‘সৌদি রাজপরিবারের রাজনীতি ঐতিহ্যগতভাবে ঐকমত্যভিত্তিক যা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমান মর্যাদা ও সম্মানের সুরক্ষার প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সৌদির সেই ঐতিহ্যগত ঐকমত্যের শাসনে ভাঙন দেশটির অভ্যন্তরে বিপর্যয় ডেকে আনবে। কারণ পরিবারের মধ্যে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভের ফলে রাষ্ট্র (সৌদি আরব) একটা অস্থিতিশীলতার দিকে এগুবে।’