বিপিএলে অধিনায়কদের বিপদ যেখানে

ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি যুগ এখন বিরাজ করছে স্বর্ণ- সময়ে। ধ্রুপদি ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্তদের কাছে এই ফরম্যাট যদিও এখনো সেভাবে জনপ্রিয় নয়। তারপরও, অন্তত বাণিজ্য-ভাবনার কারণে হলেও টি-টোয়েন্টির অস্তিত্ব দারুণভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আয়োজক বোর্ড, ব্রডকাস্টার, স্পন্সর বা দর্শক, সবার কাছেই টি-টোয়েন্টি এসেছে উৎসবের উপলক্ষ্য হয়ে। কিন্তু এই ফরম্যাটে এসে বিপদে পড়ে যান অধিনায়করা। যে বিপদ আসলেই অত্যন্ত ঘোরতর।

বিপদটা বেশি হয় ভিনদেশে খেলতে আসা অধিনায়কদের। যারা দলে পান প্রায় বেশির অচেনা ক্রিকেটারদের। যাদের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে প্রায় কোনো ধারণাই থাকে না তাদের। যেমন এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিপদে পড়েছেন মোহাম্মদ নবি, মিসবাহ উল হক ও ড্যারেন স্যামিরা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, চিটাগং ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংসের এই তিন অধিনায়কের প্রত্যেকেই তাদের প্রথম ম্যাচ হেরেছেন।

এদের মধ্যে বৃহত্তম বিপদটা সম্ভবত মোহাম্মদ নবির। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই আফগান ক্রিকেটার এসেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলার জন্য। অধিনায়কত্বের কোনো প্রস্তুতিই তার ছিলো না। কিন্তু তামিম ইকবালের ইনজুরির কারণে হঠাৎ করেই তাকে দেয়া হয় দায়িত্ব।

কোনো কিছু বোঝার উঠার আগে তাকে দল নিয়ে নেমে পড়তে হয় সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে। যে দলে তাকে সামলানোর দায়িত্ব নিতে হয় জস বাটলার, মারলন স্যামুয়েলস ও ডোয়াইন ব্রাভোর মতো ক্রিকেটারকে। সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দেশ আফগানিস্তানের এই ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতা ছিলো নিজ দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার। তারপরও বিপিএলের মতো ‘কুইক টাইপের’ টুর্নামেন্টে অধিনায়কত্ব করার যথেষ্ট যোগ্যতা তার আছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।

যদিও তার সতীর্থরা তাকে দিচ্ছেন পাশ মার্ক। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে আসরে নিজেদের প্রথম জয় পাওয়ার আগের দিন নবির অধিনায়কত্ব নিয়ে কুমিল্লার উইকেটরক্ষক লিটন কুমার বলেন, ‘নবি খুব ভালো অধিনায়ক। তার অধীনে খেলে ভালোই লাগছে।’

নবিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাইফুদ্দিনও। তরুণ এই অলরাউন্ডার মঙ্গলবার চিটাগংকে হারানোর ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচসেরা। তিনি বলেন, ‘উনি (নবি) মাঠ ও মাঠের বাইরে একজন বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ। গত ম্যাচে তিনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। আজও (মঙ্গলবার) প্রতিটি বল করার আগে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সব মিলিয়ে তিনি একজন ভালো অধিনায়ক।’

সতীর্থদের প্রশংসায় ভাসলেও অধিনায়কত্ব যে নবির জন্য খুব সহজ হচ্ছে না, তা তিনিই স্বীকার করেছেন একদিন আগে। বলেছেন যে, যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জস বাটলার বা স্যামুয়েলসদের মতো সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচ্ছেন তিনি।

নবির চেয়ে কাজটা তুলনামূলক সহজ হচ্ছে স্যামির জন্য। কারণ গত বিপিএলেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজশাহী কিংসকে। ফলে কয়েকজন ক্রিকেটারকে তার আগেই চেনা ছিলো। নতুন করে চেনার মতো কষ্টটা করতে হয়নি তাকে। যেটি করতে হচ্ছে মিসবাহ উল হককে। কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক বিপিএলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিটাগং ভাইকিংসকে এবং প্রথম ম্যাচেই তাকে সহ্য করতে হয়েছে বড় হার।

ম্যাচ শেষে বিপিএলের মতো দ্রুত গতির টুর্নামেন্টে অধিনায়কদের বিপদ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিলো তাকে। উত্তরে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বলেন, ‘এ ধরনের টুর্নামেন্টে আসলে দলের সবাইকে দ্রুত চিনে নেয়া ও সবার দক্ষতা ও সামর্থ্য জানা ছাড়া উপায় নেই। কারণ আজ (মঙ্গলবার) আমাদের একটা ম্যাচ, আবার কাল আরেকটা ম্যাচ। এখানে তাই স্থিতিশীল হওয়ার মতো সময়ই নেই। এ ধরনের টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে নিজেদের দ্রুত চেনাই একমাত্র পথ।’

অধিনায়কদের বিপদ থেকে উদ্ধারের পথটা বাতলে দিয়েছেন মিসবাহ। কিন্তু কাজটা যে সহজ নয়, সেটা নিশ্চয় বলে দেয়ার দরকার নেই। বিপিএল বা এ ধরনের দ্রুত গতির টুর্নামেন্ট যতোই জৌলুস নিয়ে আসুক না কেনো, অধিনায়কদের কাছে এ সব টুর্নামেন্ট আসলে বিপদের অন্য নাম!