জাকির নায়েককে 'আশ্রয়' দিয়েছে মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ধর্মীয় নেতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব জাকির নায়েককে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সম্প্রতি জাকির নায়েককে দেশটির প্রশাসনিক রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ, হাসপাতাল ও রেস্তোরাঁতে দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দেশটির সংসদে জাকির নায়েককে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জাকির নায়েকের সঙ্গে এক বৈঠকের ছবিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। গত অক্টোবরে দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়ায় জনসম্মূখে আসেন জাকির নায়েক। দেশটির পুত্রজায়া নামের মসজিদে দেহরক্ষীসহ তাকে দেখা যায়।

বলা হচ্ছে, পুত্রজায়া মসজিদেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নামাজ পড়তে আসেন। জাকির নায়েকের কাছে রয়টার্সের এক নারী সাংবাদিক ভারতে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত সম্পর্কে জানতে চান। জাকির নায়েক বলেন, 'এভাবে প্রকাশ্যে নারীদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।' রয়টার্সের পক্ষ থেকে তার মন্তব্য জানতে চাইলেও কোন জবাব দেননি জাকির নায়েক।

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, 'জাকির নায়েক বিগত কয়েক মাস থেকে পুত্রজায়াতে শুক্রবার করে জুমার নামাজ আদায় করছেন।' প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা বলেন, 'মালয়েলিয়ার কয়েকটি মসজিদ, হাসপাতাল এবং রেস্টুরেন্টে জাকির নায়েককে অহরহ দেখা যাচ্ছে।'

গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি সংসদে বলেন, 'জাকির নায়েককে পাঁচ বছর আগে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই দেশে বাস করার সময় জাকির নায়েক কোনো আইন ও নিয়ম ভঙ্গ করেননি। ফলে তাকে গ্রেপ্তার বা আটকের কোন বিষয় থাকতে পারে না।'

উপপ্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'ভারত জাকির নায়েককে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মালয়েশিয়াকে কোন অনুরোধও করেনি।' এসব ঘটনা মধ্যেই জাহিদ হামিদি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাকির নায়েকের সঙ্গে বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে মালয়েশিয়ার কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী দেশটির হাইকোর্টে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, 'জাকির নায়েক মালয়েশিয়ায় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।'

২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় জঙ্গি হামলার পরপরই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় উস্কানির অভিযোগ ওঠে। তখন থেকেই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থা। এরপর নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে জঙ্গি কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, অর্থ সহায়তা, অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর জাকির নায়েকের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় জাকির নায়েকের এনজিও। এরপরই জাকির নায়েক বিদেশে পাড়ি জমান।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ভারতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর জুলাইয়ে জাকির নায়েকের আন্তর্জাতিক পাসপোর্টটিও বাতিল করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রচার বন্ধ হয় জাকির নায়েকের পিস টিভির।