অপার মুগ্ধতা নিয়ে প্রস্তুত সিলেট স্টেডিয়াম

বাংলাদেশে বেড়াতে এলে বিদেশি পর্যটকরা তাদের ‘মাস্ট ভিজিট’ তালিকায় যে সব নাম লিখেন, সেখানে সিলেটের নামটা অবশ্যই থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই শহর পর্যটকদের মন ভালো করে দেয়ার জন্য সাজিয়ে রেখেছে নানা উপকরণ। সেই উপকরণের মধ্যে যোগ হয়ে গেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও। এখনো বাংলাদেশ দল এখানে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি বলে দেশ-বিদেশের দর্শকদের কাছে স্টেডিয়ামটি প্রায় অচেনা। কিন্তু সৌন্দর্য কি আর খুব বেশি দিন আড়ালে থাকে? রাখা কি যায় আসলে?

শনিবার থেকে শুরু হতে যওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে নিজের অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দেখাতে প্রস্তুত সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। শনিবার ঢাকা ডায়নামাইটস ও সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচ দিয়ে বিপিএল অভিষেক হচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের। অভিষেক আসলে অনেক দর্শকেরও হবে— এবারই যে তারা প্রথমবার বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামটি দেখতে পারবেন টিভির পর্দায় বা সরাসরি মাঠে এসে। এও তো এক ধরনের অভিষেকই!

টিভিতে দেখার চেয়ে সরাসরি যারা স্টেডিয়ামে চলে আসবেন, তাদের রোমাঞ্চটাই থাকবে বেশি। স্টেডিয়ামের মূল ফটকে আসার আগেই চোখে পড়তে থাকবে রাস্তার পাশের চা বাগান। এরপর আধুনিক স্থাপত্যশৈলিতে তৈরি মূল ফটকই জানান দিবে যে, এই স্টেডিয়ামকে কেনো বাংলাদেশের সুন্দরতম বলা হচ্ছে।

মূল ফটক পেরিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে ঢুকতে বাড়তে থাকবে মুগ্ধতা। সেই মুগ্ধতায় মনের অজান্তে যে কেউ ‘বাহ’ বলে উঠবেন পশ্চিম দিকের ‘গ্রিন গ্যালারি’ দেখে। যেখানে ছোট টিলা কেটে বানানো হয়েছে দর্শকদের ১০ ধাপের বসার জায়গা। সিলেট স্টেডিয়ামের মাধ্যমেই গ্রিন গ্যালারির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটেছে বাংলাদেশি দর্শকদের। এই গ্যালারির পাশেই স্থাপন করা হয়েছে ইলেক্ট্রিক স্কোরবোর্ড।

গ্রিন গ্যালারিই অবশ্য স্টেডিয়ামটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য নয়। এর মূল আকর্ষণ উত্তরপাশের প্যাভিলিয়ন ভবন। যেখানে দুই তলা গ্যালারির নিচে দুটি ড্রেসিংরুম। উপরে ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলির ধাঁচে তৈরি লাল টালির ছাউনি। দূর থেকে তাকালে উপর দিয়ে উড়তে থাকা মেঘকে মনে হবে যেনো ছাউনি ছুঁয়েই যাচ্ছে!

প্যাভিলিয়নের পূর্ব পাশে ম্যানুয়াল স্কোরবোর্ডের পরপর দীর্ঘ গ্যালারি। দুই তলা বিশিষ্ট গ্যালারির উপর রয়েছে স্টিলের ছাউনি। বাংলাদেশের আর কোনো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এতো বড় ছাউনি চোখে পড়েনি। প্যাভিলিয়নের উল্টো দিকে প্রেসবক্স এবং মিডিয়ার অন্যান্য ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশের অন্যান্য স্টেডিয়ামে প্রেসবক্স উত্তর পাশে থাকলেও সিলেটে দক্ষিণ পাশে। এই ভবনেও আছে আছে দুটি ড্রেসিংরুম।

২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে সিলেট স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে। আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ের সেই ম্যাচের পর মোট ছয়টি টি-টোয়েন্টি হয়েছে এখানে। কিন্তু বিপিএলে যে দর্শক সমাগম ঘটতে যাচ্ছে, তা আগে ঘটেনি। ফলে সিলেট স্টেডিয়াম সর্বোচ্চ প্রচার-আলোতে আসছে এবারই।

১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটি যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালে। প্রাথমিকভাবে ১৩ হাজার দর্শকের বসার সুবিধা ছিলো এখানে। পরে তা বাড়ানো হয়েছে আরো পাঁচ হাজার। ধারণক্ষমতা খুব বেশি না হলেও সিলেট স্টেডিয়াম দর্শক এবং খেলোয়াড়দের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে মূলত এর প্রকৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে সৃষ্টি হওয়া সৌন্দর্যের কারণে।

মাশরাফি মর্তুজাই যেমন, শুক্রবার অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাঠ নিয়ে তার মুগ্ধতার কথা শোনালেন। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় এটা একটা আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম। সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। গ্রিন গ্যালারি বা সাধারণ গ্যালারি, সবই আন্তর্জাতিক মানের। এই মাঠটা দেখতেও দারুণ।’

এই স্টেডিয়াম মুগ্ধতা ছড়িয়েছে সাকিব আল হাসানের কাছেও। বিশ্বজুড়ে নানা জায়গায় খেলে বেড়ান বলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্টেডিয়াম নিশ্চয় তারই দেখা। তার চোখেও সিলেট স্টেডিয়ামকে মনে হচ্ছে দারুণ। শুক্রবার অনুশীলন ছিলো সাকিবের দল ঢাকা ডায়নামাইটসেরও। অনুশীলনের পর সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

সাকিব বলেন, ‘সিলেটে অনেক আগে একবার খেলেছি। এই স্টেডিয়ামটা আমার খুব প্রিয়। আশপাশের পরিবেশও দুর্দান্ত। বিদেশি সুন্দর সুন্দর স্টেডিয়ামের মতো এটি। যা আমাদের দেশে একেবারে ভিন্নরকম।’ সাকিবের মতো সিলেট স্টেডিয়ামের মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকেও। খুলনা টাইটান্সের অধিনায়ককে বেশি মুগ্ধ করেছে গ্যালারি। তিনি বলেন, ‘আগে এখানে একবার খেলেছি। তবে তখনকার চেয়ে এখন অনেক সুন্দর হয়েছে। বিশেষ করে গ্যালারি দেখতে অসাধারণ। আশা করি এখানে অনেক দর্শক আসবে।’

দর্শক আসলে কেমন আসবে— বিপিএল শুরুর একদিন আগেও তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কারণ টিকিট পাওয়া নিয়ে অসহনীয় ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে সিলেটবাসীর। ভেন্যুর মোট ১৮ হাজার টিকিটের ১৫ হাজারই দর্শকদের কাছে যাওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতো টিকিট দর্শকদের কাছে যাচ্ছে, কে জানে!

দর্শক শেষ পর্যন্ত যতোই আসুক, সিলেট স্টেডিয়ামের মুগ্ধতা ছড়ানো সৌন্দর্যের তাতে কিছুই যায় আসে না। উপস্থিত হতে পারা বা না পারা; সব দর্শকই যেই যে এই স্টেডিয়ামকে মুগ্ধ হয়েই বরণ করবেন, তা বলে দেয়া যায় নিশ্চিত করে এবং একটুও ঝুঁকি না নিয়ে!