ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল নীল দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন একে অপরের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

Teachers fight in DU blue party meeting 2 nov 2017

গতকাল বৃহস্পতিবার ২ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি জাতির জন্য লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ৭ মে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে ডাকা নীল দলের সাধারণ সভায় শিক্ষকদের মধ্যে দফায় দফায় হাতাহাতি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছিলো। সেখান থেকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে নীল দলের বড় একটি অংশ ওয়াকআউট করেছিলেন।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং নীল দলের আহ্বায়ক কমিটিসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় পূর্ব নির্ধারিত এক সভা ছিল। এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চারশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।

বৈঠকের শুরুতেই ফলিত রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। একই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বক্তব্য দিতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি ও বিগত সময়ের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন। প্রক্টরের বক্তব্যের পরে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বক্তব্য দিতে আসেন। তিনি তার বক্তব্যে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সময়ের বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন।

জামাল উদ্দীন তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে আরেফিন সিদ্দিকের সমালোচনাকারী শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি সাবেক উপাচার্যকে নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে উচ্চ বাক্যালাপ করেন। এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী জামাল উদ্দিনকে শান্ত হয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য বলেন।

এতে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে এবং উভয়ে উভয়ের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হন বলে দাবি করেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেছেন।

হামলার শিকার অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, ‌‌'প্রক্টর আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছেন। তার সাথে অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ মাসুম ও ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শীতেশচন্দ্র বাসার যোগ দিয়ে আমাকে নিচে ফেলে চেয়ার দিয়ে মেরেছে।'

প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, 'সম্মানের পেশা শিক্ষকতা করতে এসে এমন হামলার শিকার হতে হবে তা কখনোই ভাবিনি। জামাল উদ্দিন আমার জুনিয়র শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও সে আমার উপর প্রথমে হামলা করেছে। সে আমার বুকের উপর সজোরে থাবা দিয়েছে এবং ধাক্কা দিয়েছে। তখন কয়েকজন শিক্ষক তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালালেও সে তাদেরকে ছাড়িয়ে এসে আমার উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে বার বার।'

প্রক্টর বলেন, ‌'সে আমাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার পরেও আমি তাকে আক্রমণ না করে শান্ত হতে বলেছি। সে এমনভাবে আগ্রসী এবং মারমুখো ভূমিকা পালন করেছে যে, তাতে মনে হয় পূর্বপরিকল্পিতভাবে সে আমার উপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত।'

নীল দলের পণ্ড হওয়া সভার শেষ দিকের মুহূর্ত                               মুঠোফোনে ধারণকৃত

এ বিষয়ে নীল দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, ‌'আমার ৬৩ বছরের জীবনে এমন ঘটনা কখনও দেখিনি। একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের উপর হামলা করতে পারে, এমনটা কল্পনার বাইরে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, বিব্রত এবং শঙ্কিত।' শুক্রবারের মধ্যে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‌'এই ঘটনার মূল কারণ হল শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি। এমন ঘটনার নিন্দা জানাই।'

তিনি বলেন, ‌'প্রক্টর নিজেই এ ঘটনার সাথে জড়িত, তাহলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কতটা নিরাপদে আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আদতে কিছু নাই আর। বাকিটা রাগঢাক ছাড়াই শিক্ষকরা উন্মুক্ত করলেন। লজ্জিত বোধ করছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়ি!'

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী বছরের ৬, ১৩ ও ২০ জানুয়ারি তিন ধাপে ঢাকার তিনটি কেন্দ্র ও সারা দেশের ৪২টি কেন্দ্রে এ নির্বাচন হবে। ২০ জানুয়ারী নির্বাচন শেষে পরদিন ২১ জানুয়ারি ভোট গণনা করে ফালাফল প্রকাশ করা হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.