ভারতে নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

ভারতে পাঁচশ’ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এই বর্ষপূর্তিতে সরকার পক্ষ ও বিরোধীদলীয় জোট পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

ভারতে ১৮ বিরোধী দলের সমন্বয় কমিটি নোট বাতিলের বর্ষপূর্তির দিনটিকে ‘কালো দিন’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে সরকার ও বিজেপি বিরোধী দলের অভিহিত ‘কালো দিবস’-এর পাল্টা অবস্থান নিয়ে ‘কালো টাকা বিরোধী দিবস’ হিসেবে পালনের ডাক দিয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে বলা হয়, ভারত সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে এবং নোট বাতিলের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে বলে বিরোদী দল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ‘কালো দিবস’ পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই ইস্যুতে গতকাল বুধবার সরকারপক্ষ ও বিরোধীদলীয় নেতাদের পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী বিবৃতি দেয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সরকার কালো টাকার মালিকদের সাদা করার সুযোগ দিতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার সফল।’

অন্যদিকে বিরোধীদলের প্রকাশ করা বিবৃতিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেন, ‘ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে দেশবাসীকে যা জানানো হচ্ছে তা সঠিক না, তাই দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

নোট বাতিল প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। দেশে নোট বাতিল করে আদৌ কালো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এক শতাংশও দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ হয়নি। এই সিদ্ধান্তে দেশের সকল স্তরের মানুষের ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র দলীয় লাভ হয়েছে, তাদের সব কালো টাকা সাদা হয়ে গেছে। তারা নিজেদের টাকা বিদেশে মজুত করেছে।’

এদিকে বিজেপি’র সিনিয়র নেতা ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি একই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘কালো টাকা আটকাতে এটা সরকারের অনন্য এক সিদ্ধান্ত ছিল। সন্ত্রাস ও অর্থপাচার রুখতে সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেস এখন সোচ্চার। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন কোন পদক্ষেপই নেয়নি।’

আবার জেটলির মন্তব্যে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা আনন্দ শর্মা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘কালো টাকা উদ্ধারের উদ্দেশ্যে যদি নোট বাতিল করা হয় তাহলে সেই কালো টাকা গেল কোথায়? সরকারই প্রকারান্তরে স্বীকার করেছে ৯৯ শতাংশ টাকা ফিরে এসেছে। মানুষকে পথে বসিয়ে, জুলুম করে সরকার এখন উৎসব পালন করতে চাচ্ছে এবং মানুষই তার বিচার করবে।’

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিরোধী দলের ‘কালো দিবস’-এর পাল্টা কর্মসূচি ‘কালো টাকা বিরোধী দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে বিজেপি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই একদিকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করবে বিরোধী দল, অন্যদিকে নোট বাতিলের সুফল তুলে ধরবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা।