ধর্ষণ যখন অস্ত্র, পড়ুন রোহিঙ্গা নারীদের করুণ কাহিনী...
- Details
- by তাইয়্যিপ আহসান রাফান
মিয়ানমারের সেনাদের বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না রোহিঙ্গা নারীরা। রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য তারা যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণকে এক প্রকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত জাতিসংঘের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখানে গত এক সপ্তাহে অন্তত এক লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেক নারীই যৌন সহিংসতার শিকার।
আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঢল না থামার কারণ হিসেবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের যৌন নির্যাতন বিষয়ক স্কায়ি হুইলার বলেন, 'মায়ানমারের সেনাবাহিনী দেদারসে ধর্ষণযজ্ঞ চালাচ্ছে, জাতিগত (মুসলিম) নিধনে তারা ভয়ঙ্কর এ পদ্ধতি ব্যবহার করছে।' রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হিউম্যান রাইটসের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'ধর্ষণ ও ভয়ঙ্কর যৌন নিপীড়নের মাত্রা ওই এলাকায় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এটা (ওই এলাকাকে) পতিতালয়ের মত ব্যবহার করছে। এতে অপমানে (ধর্ষিতা) নারীরা বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।'
তবে মিয়ানমার সরকার সব ধরণের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, এটা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান। তারা মানুষের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। পালিয়ে আসা নির্যাতিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাদের কাছে ধর্ষণ এক প্রকারের অস্ত্র, যা তারা রোহিঙ্গাদের ওপর প্রতিদিন প্রয়োগ করছে। তাদের এ বর্বরতা গণহত্যা কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ।
এক স্কুলের সব ছাত্রীকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গণধর্ষণ: ১৮ বছর বয়সী নুরশীদা রয়টার্সকে জানান, তার সঙ্গে মিয়ানমার সেনাদের অত্যাচারের কথা। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পালিয়ে আসা এ তরুণী জানান, গত মাসে ইউনিফর্ম পরিহিত ৩০ সেনার এক বহর তাদের স্কুলে ঢুকে। তারা তাদের একটি অডিটোরিয়ামে ঢুকে নির্যাতন চালায়।
ওই স্কুলছাত্রী বলেন, 'সবাই আমরা এক কোনায় ছিলাম, পুরুষদের ঘাম গলগল করে পরছিল, তারা সবাই হাঁপাচ্ছিল। এখনই গণধর্ষণ শুরু হবে। হাতে চুড়ি পরা, মাথায় স্কার্ফ পরা নুরশিদাকে তারা (ধর্ষণের জন্য) পছন্দ করে। সেখানে বন্দুক ও রামদা হাতে ছয় সেনা আমাদের জিম্মি করে। এর মধ্যে একজন আমাকে ফ্লোরে শক্তভাবে ধরে। আমি তখন চিৎকার করতে থাকি, এ সময় আরেক সেনা আমার গালে থাপ্পর দেয়। আমি তখন নীরব হয়ে পড়ি, তারা আমাকে ধর্ষণ করে। আমার কিছুই করার ছিল না।'
এরপর তার দুই বান্ধবীকেও এভাবে ফ্লোরে শুইয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের ওই স্কুলের সব ছাত্রীরাই ধর্ষিতা হল। তাদের সবাই উচ্চস্বরে চিৎকার করছিল।' নুরশিদা বাংলাদেশের কুতুবপালং ক্যাম্পে এখন শরণার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। নুরশিদার এ ঘটনা রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ধর্ষিতা ওই স্কুল ছাত্রী নেইসাপরু গ্রাম জ্বলতে দেখেছিল বলেও জানায়।
ওই ক্যাম্পে সহযোগিতার কাজে দায়িত্বরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল রাশেদ হাসান রয়টার্সকে বলেন, 'এ ধরণের ঘটনার যুদ্ধের সময় ঘটে থাকে। তখন ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় শুনেছি।' সব বয়সী ও সব শ্রেণির নারীরা এরকম বর্বোরচিত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। শিশুদের সামনে তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। রয়টার্সকে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের সাবা জারিয়ি বলেন, ‘ধর্ষণ এক ধরণের শক্তি (প্রদর্শনের মহড়া), যা কোনো বয়স, লিঙ্গ ও ধর্ম মানে না।
ধর্ষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না অন্তঃস্বত্ত্বা নারীরাও: গত ৫ দিন আগে একশিশু সন্তান জন্ম দিয়েছেন জান্নাত। তিনি তার নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আমি তখন নয় মাসের গর্ভবতী। মিয়ানমার সেনারা গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে আমার স্বামীকে তারা হত্যা করে, আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়। তখন থেকে আর আমার তিনটি শিশু সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।' যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন তার ৫ দিন বয়সী শিশু ফাতিমা তাঁবুতে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। অস্থায়ী তাঁবুতে তার ক্ষীণ দৃষ্টি, যাকে সে এখন তার ঘর ভাবছে।
গর্ভবতী থাকাকলীনও নির্যাতন থেকে রেহাই পায় না জান্নাত। তিনি বলেন, 'একদিন অনেক সেনা দরজা ভেঙে প্রবেশ করল। তারা দেখল আমি অন্তঃসত্ত্বা, কিন্তু তারা সবাই আমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করল।' দিন শেষে উলঙ্গ করে পেটানো হল। তার সন্তানরা (এ দৃশ্য সইতে না পেরে) চলে গেল।
'আমি তাদের জন্য চিৎকার করে কাঁদছিলাম, এখন জানি না তারা কোথায় আছে'। তিনি বলেন, 'আমি আর মিয়ানমারে যেতে চাই না...। ওখানে আমার সব হারিয়ে গেছে'। ২০ বছর বয়সী পারভীন জানান, যখন তিনি ৫ মাসের গর্ভবতী তখন তিনি মিয়ানমার সেনাদের হাতে ধর্ষিতা হন। তার স্বামীকে তারা জবাই করে। তিনি বলেন, 'তারা আমাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি দেখি গ্রাম শূন্য। আমার শ্বশুর আমাকে খুঁজছেন। আমি তখন উলঙ্গ অবস্থায় ওই ঘরে শোয়া।'
ধর্ষণের পর তার রক্তাক্ত শরীর তার শাশুড়ি ধুয়ে দিয়েছিল। তারা (শ্বশুর-শাশুড়ি) তাকে জানায়, তার দায়িত্ব আর তারা নিতে পারবে না। আমাকে তারা প্রত্যাখ্যান করে। এখন সে একটি বাঁশের বাড়িতে একাকী বাস করে। এখন সে পুরষ দেখলেই ভয় পায়। ধর্ষিতা ওই নারী বলেন, 'আমার আর বিয়ে হবে না, কারণ আমি ধর্ষিতা। আমার কোনো চাহিদা নেই, আমি আমার মেয়েকে বড় করতে চাই। আমার সব হারিয়ে গেছে। সেই আমার সব।'
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.