বাবরি মসজিদের মতো তাজমহলও ধ্বংস করা হতে পারে!

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের প্রেমের সৌধ তাজমহল নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। ভারতের উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সিনিয়র নেতা ও রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী আজম খান চলমান এ বিতর্কের মধ্যেই নতুন এক আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।

তার আশঙ্কা, বাবরি মসজিদের মতো তাজমহলকেও ডিনামাইট ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হতে পারে। আজম খানের মতে, যদি বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে দেশের যেকোন সৌধই ভেঙে ফেলা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যেকোন দিন তাজমহল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ‘দেশের কোনও সৌধই এখন নিরাপদ নয়। রাম মন্দিরের নামে যারা বাবরি ভাঙতে পারে, তারা সবই করতে পারে। আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে বলেই ওই সৌধ এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।’

আজম খান এমন এক সময় এই মন্তব্য করলেন যখন ভারতজুড়ে উগ্র-হিন্দুত্ববাদী নেতারা তাজমহল ভেঙ্গে দিতে কিংবা নাম পরিবর্তন করে তা ধর্মীয় উপাসনালয়ে পরিণত করার উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ সংগীত সোম মন্তব্য করেছেন, ‘তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতিতে কলঙ্কের চিহ্ন।’ সংগীত সোমের বিতর্কিত এ মন্তব্যের পরে ভারতজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে অস্বস্তিতে পড়ে যায় বিজেপি। তখন সোমের ওই বক্তব্য তার ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে দায় এড়ায় বিজেপি। সোমকে এমন মন্তব্যের জন্য কারণ দর্শাতেও বলা হয়।

তখনও আজম বলেছিলেন, ‘শুধু তাজমহল কেন, সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, লালকেল্লাও গুঁড়িয়ে দেয়া হোক! কারণ সেগুলিও দাসত্বের প্রতীক, সেগুলোও গোলামির ইতিহাস বহন করছে!’

অন্যদিকে বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ার গণমাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন, ‘তাজমহল আসলে হিন্দু মন্দির। মুঘল সম্রাট শাহজাহান শিবমন্দির ভেঙে সেখানে সৌধ তৈরি করেছেন। তাজমহলের নাম পরিবর্তন করে ‘তেজো মহল’ করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার আরেক বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দাবি করেছেন, ‘যে জমিতে তাজমহল দাঁড়িয়ে আছে সেই জমিটি জয়পুরের রাজাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। তার হাতে এমন নথি এসেছে, যা থেকে স্পষ্ট যে জয়পুরের রাজা–মহারাজাদের তাজমহলের জমিটি বেচতে বাধ্য করেছিলেন শাহজাহান। ক্ষতিপূরণ বাবদ সেই রাজাদের ৪০টি গ্রাম দেয়া হয়েছিল।’ যাকে কোনভাবেই ওই জমির দামের সঙ্গে তুলনা করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নথিতে আরও দেখা যাচ্ছে, ওই জমিতে একটি মন্দির ছিল। কিন্তু মন্দির ভেঙেই তাজমহল বানানো হয়েছিল, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।’ শীঘ্রই ওই নথি তিনি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করবেন বলেও জানিয়েছেন!

তবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কে তাজমহল তৈরি করেছেন সেটি বড় কথা নয়। ভারতীয় শ্রমিকদের ঘাম এব‌ং রক্তে তৈরি হয়েছে তাজমহল।’

আর বিজেপি নেতাদের এই সব মন্তব্যের পরেই তাজমহল নিয়ে এই ভয়াবহ আশঙ্কা প্রকাশ করেন আজম খান। তবে তার এই আশঙ্কাকে একেবারে উঁড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।