এবার অক্সফোর্ড থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে সু চির নাম!

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেকে লুকিয়ে রেখে মহাবিপদে পড়েছেন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি। একের পর এক পুরস্কার আর সম্মাননা হারাচ্ছেন মিয়ানমারের 'অহিংস' আন্দোলনের এই নেত্রী। এবার ছাত্র জীবনের স্মৃতি বিজড়িত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কমন রুম থেকে মুছে যাচ্ছে তার নাম।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট হিউ কলেজের মূল ফটক থেকে অং সান সু চির ছবি সরানো হয়েছে আগেই। এবার কলেজটির জুনিয়র কমনরুম থেকে সু চির নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলেজের শিক্ষার্থীরা সু চির নাম কমন রুম থেকে মুছে ফেলার পক্ষে ভোট দেন।

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউ কলেজে আজ থেকে প্রায় ৫৩ বছর আগে রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেন সু চি। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কলেজটিতে পড়াশোনা করেন সু চি। ২০১২ সালে সু চি তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার ৬৭তম জন্মদিন কলেজ ক্যাম্পাসে পালন করেন। ওই বছরেই তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয় অক্সফোর্ড।

তবে সু চির সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে না অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেন্ট হিউ কলেজ বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নারী, পুরুষ, শিশুদের ওপর যে বর্বরতা চলছে, সেই ঘটনায় সু চির অবস্থান অগ্রহণযোগ্য। তিনি যে নীতি-আদর্শের কথা একসময় বলতেন, তার সঙ্গে তার বর্তমান অবস্থানের কোন মিল নেই।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গ মুসলমানদের জাতিগত নিধন এবং চলমান গণহত্যার প্রেক্ষিতে ২৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপে পড়েছেন দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি। যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসনও ব্যবস্থা নিয়েছে সু চির বিরুদ্ধে। সু চিকে দেয়া একটি সম্মাননা পুরস্কার এবং সংস্থাটিতে তার সদস্যপদ স্থগিত করেছে ইউনিসন। এছাড়াও মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সু চিকে দেয়া সম্মানসূচক একটি ডিগ্রী পুনর্বিবেচনা করছে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়।

চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেই হামলার পর রাখাইনে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। অভিযানের নামে তখন থেকেই শুরু হয় রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধনযজ্ঞ। পুড়িয়ে দেয়া হয় রোহিঙ্গাদের গ্রাম। নারীরা হন ধর্ষণের শিকার। জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া এমনকি শিরচ্ছেদ করার ঘটনা ঘটে। সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর এই নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে পাঠ্যপুস্তকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন যোগ্য 'জাতিগত নিধন' বলে আখ্যায়িত করেছে। ইতিহাসের ঘৃণ্য এই অভিযানে ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহতের খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার নিহতের সংখ্যা বলছে মাত্র চারশত।