ভারতীয় সীমান্তের শেষ গ্রামে চীনা সেনাদের আনাগোনা

ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তের নিকটবর্তী 'ডোকলাম' নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে বেইজিং-দিল্লীর সম্পর্কটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। বিগত কয়েক সপ্তাহে দেশদুটির কূটনৈতিক তৎপড়তায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দুই দেশই সীমান্তে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। এরমধ্যে বিবিসি'র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চীন সীমান্তবর্তী ভারতের গ্রামগুলোতে অবাধে প্রবেশ করছে চীনা সেনারা।

জানা গেছে,অরুণাচল প্রদেশের উত্তর পূর্বে গেলে সীমান্তবর্তী গ্রামটির দেখা পাওয়া যায়। প্রায় 'অরক্ষিত' ভারতীয় গ্রামটির নাম চাংলোহাগাম। অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই গ্রামে মেঘ ও পাহাড়ে এখানে যেন কথা বলে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত গ্রামটির দৈনন্দিন জীবন বেশ কষ্টের। কেউ অসুস্থ হলে ভারতীয় ভূখণ্ডে আশপাশে নেই কোন হাসপাতাল। রোগীকে যেতে হয় চাংলোহোগাম গ্রাম থেকে ৫ ঘণ্টা দূরের কোন হাসপাতালে। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, চাংলোহাগামের উল্টোদিকে চীনের অবস্থা বেশ ভালো। চীন সরকার সেখানে নানাভাবে উন্নয়ন ঘটিয়েছে। পাকা রাস্তা, হাসপাতালসহ সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা আছে। সীমান্তের কাছাকাছি থাকা পরিবারগুলোকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে চীন সরকার। তবে ভয়ংকর ব্যাপার হলো চাংলোহাগামের বাসিন্দারা ভারতীয় ভূখণ্ডের অনেক জায়গায় চীনা সেনাদের দেখেছেন।

গ্রামবাসী জানায়, তারা অনেক জায়গায় চীনা জওয়ানদের ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন। বিবিসির কাছে একজন দাবি করেছেন, ভারতীয় সীমান্তের ১০০ মিটার ভিতরে চীনা ফৌজ পিপলস লিবারেশন আর্মিকে দেখেছেন তিনি। চীনের সেনারা ভারতীয় অধিবাসীকে জিজ্ঞেস করেছে সীমান্তের কাছাকাছি ভারতীয় জওয়ানদের সংখ্যা কতো। উত্তরে সেই ব্যক্তি জানান, ভারতের অংশে মোট ৩০০ ভারতীয় সেনা অবস্থান করছে। এরপরও ভারতীয় ভূখণ্ডে আরো কয়েকঘণ্টা সময়কাটিয়ে নিজেদের দেশে চলে যায় চীনা সেনারা। চীনের এমন খবরদারি বেশ ভালোভাবেই আলোচনা হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমে।

চীন-ভারতের মধ্যে রেষারেষি থাকলেও চাংলোহাগামের স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন না। সেখানকার ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত দুর্গম। ভারত-চীন কোন দেশই তাদের ওপর প্রভাব ফেলে না। নিজেরা কাজকর্ম করে দিন পার করতে পারলেই সন্তুষ্ট তারা।

সর্বশেষ ১৯৬২ সালে সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ এক পর্যায়ে থেমে গেলেও সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। কয়েকমাস আগে ডোকলাম ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে দেশ দুটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোকলাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে চলে যাচ্ছিল।'

বলা হচ্ছে, ভারত-চীন সীমান্ত এমন অবস্থায় আছে যে যেখানে কোনও কাঁটাতার লাগানো বা অন্য কোনভাবে ভাগ করা সম্ভব না। উভয় দেশ যদি লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল মেনে চলে তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।