রাজধানীর 'সুবোধ বালকদের' ধরতে গোয়েন্দারা মাঠে

রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন দেয়ালে বিশেষ লেখা 'সুবোধ বালক' নিয়ে নগরবাসীর মাঝে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে লেখা 'সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই', 'সুবোধ তুই পালিয়ে যা- এখন সময় পক্ষে না', 'সুবোধ তুই পালিয়ে যা ভুলেও ফিরে আসিস না!', 'সুবোধ, কবে হবে ভোর?...’। এ রকম রহস্যজনক কিছু বক্তব্য দিয়ে আগারগাঁও, মহাখালী ও পুরান বিমানবন্দরের দেয়ালে দেয়ালে ‘সুবোধ’ সিরিজের বেশকিছু গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে।

কারা কী উদ্দেশ্যে এই প্রচারণা চালাচ্ছেন সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ব্যাপক চাপে রয়েছে। কারণ উদঘাটনে ইতিমধ্যে 'সুবোধ বালক' রূপকারদের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গ্রাফিতির মধ্যে হয়তো দেশের সবার জন্য বিশেষ কোনো বার্তা আছে অথবা রাজনীতির ভেতর থেকে কেউ কেউ জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

গ্রাফিতি চিত্রে দেখা যায়, 'সুবোধ কবে হবে ভোর? সুবোধ চরিত্রের বিক্ষুব্ধ ব্যক্তির হাতে আছে আছে খাঁচাবন্দি সূর্য। তার পাশে আছে একটি শিশু। যাকে সে বলছে- কবে হবে ভোর?-বক্তব্য জুড়ে দেয়ার পর অন্ধকার থেকে আলোর পথে বা আলোর সন্ধানে 'সুবোধ' চরিত্রের একজন ছুটছেন।

বলার চেষ্টা করা হয়েছে, 'সুবোধ চরিত্রটি খুব কষ্টে আছে। সেখান থেকে মুক্তি পেতে সে প্রহর গুনছে। সময় পক্ষে নেই বলে একবার তাকে পালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরের আঁকা গ্রাফিতি-তে বলা হয়েছে, সবশেষে আঁকা গ্রাফিতিতে কোনো বক্তব্য নেই। তবে সেখানে দেখানো হয়েছে, খাঁচাবন্দি সূর্য বেরিয়ে আসার অপেক্ষায়। তার সামনে ভোরের আগমনী হিসেবে মোরগ ডাকার অঙ্গভঙ্গির প্রতীকী চিত্র দেখানো হয়েছে।

এসব গ্রাফিতির চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। গোয়েন্দাদের ধারণা, এসব গ্রাফিতি আর যাই কিছু হোক এর যারা রূপকার তাদের নিশ্চয় কোনো না কোনো উদ্দেশ্য আছে। সে উদ্দেশ্য জানতে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস টিম মাঠে কাজ করছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য এর রূপকার খুঁজে বের করা। তারা মনে করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ চক্র এমন গ্রাফিতির জন্ম দিয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'ইতিহাস থেকে দেখা যায়, ১৮৮৭ সালের দিকে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চারটি রুটি পাঠানো হতো। এই রুটি পাঠানোর মধ্যেও এক ধরনের মেসেজ ছিল। তাই এ গ্রাফিতের মধ্যেও বিশেষ কোনো বার্তা আছে, যা হয়তো আমাদের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, 'শিক্ষা, রাজনীতি, মানুষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের অগণতান্ত্রিকতা এবং গণবিরোধিতার প্রতি ইঙ্গিত করেই এগুলো প্রচার করা হচ্ছে বলে আমার ধারণা। তবে যারা এটি প্রচার করছেন তারাই এর মর্মার্থ ভালো বলতে পারবেন।'

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, 'জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। একটি ব্যর্থ হলে আরেকটি নতুন কৌশল নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। এ ধরনের দেয়াল লিখন তেমনি একটি কৌশল। রাজনীতির ভিতর থেকে কেউ কেউ ভীতি সৃষ্টি করতে দেয়ালে এ ধরনের গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। এগুলো প্রোপাগান্ডা, মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করার কৌশল।'

সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'এই দেয়াল লিখন দিয়ে দেশের- নাকি রাজনীতির ভালো দিনের ইঙ্গিত করা হয়েছে, সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।' তিনি বলেন, 'যারা করছেন তারাই এর উদ্দেশ্য ভালো বলতে পারবেন। নির্বাচন আসলে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দেয়াল লিখন হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে এ ধরনের দেয়াল লিখন বিভিন্ন বার্তা বহন করে।'