দুই কিশোরী বোনের স্কুলে যাওয়ার এক অবিশ্বাস্য গল্প

হিমালয়ের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম সায়াবায় পাহাড়ের ওপর বসবাস করে রাধিকা ও যশোধা। শিক্ষা যে জীবনের জন্য অপরিহার্য তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে দুই বোন। তাই কয়েক ঘণ্টায় পাহাড় বেয়ে নদী পাড়ি দিয়ে হলেও প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা করছে তারা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে সাহসী ও দূরদর্শী এই দুই বোনের জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়, রাধিকা ও যশোধা প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে। তারপর হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করেই দ্রুত স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

তাদের জন্য স্কুলের পথ মানেই দুর্গম এক পথ ভ্রমণ। বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে পাহাড়ি রাস্তা, ঘন বন আর নদী পাড়ি দিতে হয়। তারা যেসব বন পাড়ি দিয়ে স্কুলে যায় সেখানে রয়েছে বাঘ, ভাল্লুকসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রজাতির প্রাণি। কিন্তু এসবে ভয় বা ক্লান্তি নেই ১৪ ও ১৬ বছরের এই দুই কিশোরীর। তারা দিনের পর দিন একই পথ ধরে জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়।

বাড়ি থেকে মাসেরি এবং মাল্লা শহরে যেতে হয়। সেখানেই তাদের স্কুল। সেখানে যাওয়া আসার জন্য নেই কোন সড়ক ব্যবস্থা। তাদের পথটা খুবই দুর্গম আর সবচেয়ে বেশি কঠিন স্কুলে যাওয়া আসার সময় ঝুলন্ত ক্রেনে ভাগিরথী নদী পাড়ি দেয়া। নদীর পাড় হওয়ার জন্য ঝুলন্ত ক্রেনই তাদের একমাত্র ভরসা।

আবহাওয়া খারাপ থাকলে বা বৃষ্টির সময় এই ক্রেনে নদী পাড়ি দেয়াটা খুবই বিপজ্জনক। কারণ তখন দড়ি দিয়ে ক্রেন টেনে আনা কঠিন। এ সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এখন পর্যন্ত গ্রামের অনেকেই এই ক্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে আহত হয়েছেন, এমন কি কেউ কেউ হাত-পায়ের আঙ্গুলও খুঁইয়েছেন। তবুও শিক্ষিত হতে হলে এই পথই দুই বোনের একমাত্র অবলম্বন।

হাত বা পোশাকে যেন কোন ময়লা না লাগে সেজন্য রাধিকা ও যশোধাকে সবসময় গ্রিজ এবং ঝুলন্ত তার থেকে সাবধানে থাকতে হয়। কারণ স্কুলে নোংরা পোশাক পরে যাওয়া যাবে না।

কিন্তু এই ভাগিরথী নদী পাড়ি দিয়েই তাদের পথ শেষ নয়। এরপর তাদের স্কুলে পৌঁছাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তারপর ট্যাক্সি করে তারা পৌঁছে যায় গন্তব্যে।

যশোধা ভবিষ্যতে পুলিশের কর্মকতা হওয়ার স্বপ্ন দেখে আর শিক্ষক হতে চায় রাধিকা। তারা নিজেদের মা-বাবার মতো কম বয়সে বিয়ে করতে চায় না। তাদের স্বপ্ন অনেক লেখাপড়া করার।

সায়াবার অধিকাংশ শিশুই নয় বছর বয়সের পর স্কুল ত্যাগ করে। কারণ উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয় যা খুবই ব্যয়বহুল। তাই অধিকাংশ পরিবারের জন্যই এটা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অনেক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করে আর শিক্ষার আলো পান না। কিন্তু এতো প্রতিকূলতার মাঝেও এই দুই বোনের শিক্ষিত হয়ে ওঠার সংগ্রাম দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক।