১০ বছর আগে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলতো ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার বেগে। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র সাত কিলোমিটারে। আর মাত্র সাত বছর পর ঢাকার গাড়ি ঘণ্টায় চার কিলোমিটারের বেশি এগোতে পারবে না! এক জরিপে উঠে এসেছে এমনই হতাশার চিত্র। যা দেখে বোঝা যায়, ক্রমেই গতি হারাচ্ছে ঢাকার জীবন।

traffic of dhaka

ঢাকার নাগরিকদের জীবনে হয়তো নানা রকম দুঃখ-কষ্টই আছে। কিন্তু যানজটের কষ্টের তুলনায় সেগুলো খুবই ছোট। এই যানজট সমস্যা দিনে দিনে এতো বেড়ে যাচ্ছে যে, নগরবাসীর জীবনের চিত্রই যাচ্ছে বদলে। চাকরিজীবীদেরই যেমন, ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়া, সারা দিন কাজ করা এবং রাত করে বাসায় ফেরা; এর বাইরে আর কোনো জীবন নেই।

এর অন্যতম বড় কারণ যানজট। ১০-১২ কিলো মিটার রাস্তা যদি কাউকে দিনে দুইবার পারি দিতে হয়, তাহলে সময় চলে যায় গড়ে চার ঘণ্টা। অফিসের বাইরে একটা মানুষ যদি চার ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকে, তাহলে জীবনে আর থাকেই বা কী?

এ তো গেলো জীবনের কথা, এই যানজটের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশকে গচ্ছা দিতে হচ্ছে পাক্কা ৩০ হাজার কোটি টাকা! বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। যতো দিন যাচ্ছে, এই ক্ষতির পরিমাণ ততোই বেড়ে চলছে।

যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ সব সময়ই দায়ী করে আসছে নাগরিকদের ট্রাফিক না মানার অভ্যাসকে। কিন্তু নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভিআইপিদের জন্য লম্বা সময় সিগন্যাল দিয়ে রাখা, অবৈধ গাড়ি চলতে দেয়া, রাস্তায় পার্কিং করতে দেয়া; এ সব ব্যাপারও যে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাজধানীর যান চলাচল বন্ধ করে রাখছে, সে দিকে নজরই নেই ট্রাফিকদের।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় চলছে চরম অনিয়ম। এই বিভাগে আইনের শাসন বলে কিছুই নেই। এই সর্বনাশা ব্যবস্থাপনাই ঢাকার জীবনকে দিনে দিনে শেষ করে দিচ্ছে।’

আইনের শাসন যে নেই, তা বোঝা যায় ঢাকায় চলাচল করা ভিআইপিদের দেখলেই। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি চলাচল করলে তো কথাই নেই, সাধারণ নেতা, পাতিনেতা, শ্রমিকনেতা এমন কি হবু নেতাদের জন্যও লম্বা সময় সিগন্যাল ফেলে রাখার চিত্র দেখা যায়। এ ধরনের একটি আধ ঘণ্টার সিগন্যালই সারা দিনের জন্য স্থবির করে দেয় ঢাকাকে।

যানজটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকাবাসীর সামাজিক জীবনও। অফিস শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বহু মানুষ আর বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেয়ার সময় পান না। কিংবা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু বাইরে বেড়িয়ে আসার উপায়ও নেই। সব মিলিয়ে ঢাকার জীবনকে ক্রমেই দুর্বিসহ করে তুলছে এই যানজট। কিন্তু তা নিরসনে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ চোখে পড়ছে কমই।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় ফ্লাইওভার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এখনো বর্তমান রাস্তার বিশাল বিশাল অংশ অব্যবহৃত থাকে কেবল অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংয়ের কারণে। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেখা যায় না ট্রাফিক পুলিশকে। উদারহণ হিসেবে বলা যায়, মিরপুর দশ নম্বরের কথা। দশ নম্বর থেকে ফার্মগেট-গুলিস্তান যাওয়ার জায়গাটাতে এক সঙ্গে থেমে থাকে অসংখ্য বাস। যার ফলে পিছনে থাকা বাসগুলো ইচ্ছে করলেও সামনে যেতে পারে না। তৈরি হয় অসহ্য যানজট। অথচ সেখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণটা একটু গোছালো হলেই এই জটিলতা তৈরি হতো না।

ঢাকার এমন স্থবির জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকেন নারীরা। এ ছাড়া বয়স্ক মানুষ, স্কুলগামী শিশুরাও পড়ছে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। ঢাকার যানজট দীর্ঘ মেয়াদে শিশুদের বিকাশকেও যে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এ বিষয়ে মনোযোগ নেই কারোরই।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.